কাপ্তাই লেকে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হলো বিজু উৎসব
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে পানির দেবতা ‘গোঙামা’ কে ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল ভাসিয়ে ৩ দিন ব্যাপী পাহাড়ের অন্যতম প্রধান উৎসব বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, ত ঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু ও সাংক্রান বলে আখ্যায়িত।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৬টায় বিজু,সাংগ্রাই,বৈসুক,বিষু,বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে (রাজবাড়ি ঘাটে) কাপ্তাই হ্রদের জলে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে বাহারী রঙের ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে বৈসাবি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে চাকমা সম্প্রদায়, যেটি ফুল বিজু নামেও পরিচিত। এ সময় শিশু-কিশোর,তরুণ-তরুণীদের সঙ্গীয় হয়ে হ্রদের পানিতে ফুল ভাসান রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মামুন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি (অবঃ উপ-সচিব) প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা, বিজু,সাংগ্রাই,বৈসুক,বিষু,বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ইন্দ্র লাল চাকমা প্রমূখ। ফুল বিজু পালনের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান তারা।
অপরদিকে, সকাল ৮টায় শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানো হয়। এসময় ও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গী হয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরিনেন্দু ত্রিপুরাসহ অন্যান্য নর-নারীরা হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এছাড়াও পলওয়েল পার্ক সহ বিভিন্ন স্থানে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
ফুল ভাসানোর পরপরই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। শেষে বয়স্কদের স্নান করানো হয়। এছাড়াও পাড়ার বয়স্কদের শরীরে পানি ঢেলে তাদের আশীর্বাদ কামনা করেন তারা। দেওয়া হয় নতুন পোশাক। তাদের বিশ্বাস মতে, পুরনো বছরের সব ময়লা, পাপ, আপদ, বিপদ, গ্লাানি, ব্যর্থতা ধূয়ে-মুছে ফেলতে পানিতে ভাসানো হয় ফুল। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হয়, নতুন বছরে সবক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে সাফল্য অর্জন ও শুভ-মঙ্গলের বয়ে আসবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
ঐতিহ্য অনুযায়ী আজ চাকমা পরিবারের লোকজন ফুল দিয়ে তাদের ঘর সাজাবেন। আগামীকাল বুধবার উৎসবের প্রধান দিন ‘মূল বিজু’ উদযাপিত হবে। আগামী বৃহস্পতিবার ১লা বৈশাখ ‘গজ্যাপজ্যা’ বা বিশ্রামের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে সেই সাথে নববর্ষকেও বরণ করবেন। এদিকে উৎসবটির যথার্থ আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছবি: সমকাল