গাছে গাছে রসালো ফল কাঁঠাল, আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
গ্রীষ্মকালে বেশ জনপ্রিয় জাতিয় ফল কাঁঠাল। ছোট বড় সব বয়সী মানুষই কাঁঠাল খেতে খুব পছন্দ করে। পাঁকা খাওয়ার পাশাপাশি এ ফল সবজি হিসেবে যুগ যুগ ধরে কদর রয়েছে। কাঁঠালের বিচি (বীজ) প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর। এর বিচি মাংস ও সবজির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। যার প্রতি কেজি মূল্য প্রায় ১০-৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি, গুইমারা, রামগড়, মাটিরাঙ্গাসহ পাহাড়ি জনপদের সবকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গাছে গাছে বর্তমানে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল কাঁঠাল। তবে এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাজার পুরোদমে কাঁঠাল না উঠলেও মাস খানেকের মধ্যে কেনা-বেচার ধুম পড়বে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বারো মাসি কিছু কাঠাল বাজারে আগাম আসতে শুরু করলেও ক্রেতাদের চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতি পিছ বিক্রি হচ্ছে ১০০- ৩০০ টাকা ধরে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বেশ চাহিদাও রয়েছে কাঠালের।
পার্বত্য অঞ্চলের কাঁঠাল বেশি মিষ্টি-রসালো ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় বেশ চাহিদাও রয়েছে সারা দেশে। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এসব কাঁঠাল। বর্তমান পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষাবাদ করা হচ্ছে। আর এ কাজে জড়িত থেকে অনেকেই আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এখন পর্যন্ত গাছে কাঁঠালের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে গত বছরের তুলনায় ফলন ভাল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বাগান মালিক ও কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ি আঁকা-বাকা রাস্তার দুপাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বানিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে সৃজন করা হয়েছে জাতীয় ফল কাঁঠাল বাগান। তাছাড়া বাড়তি আয়ের আশায় বাগানের ফাঁকে ফাঁকে লাগিয়েছেন আম-লিচু ও আনারসের মত নানা রকমের ফলদ বাগান। প্রতিটি গাছের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল।
প্রতিটি গাছে ৩০-১৫০টিরও বেশি কাঁঠাল ধরতে দেখা গেছে। কাঁঠাল বাগান গুলো যেন প্রকৃতির রুপ দিয়ে সাঁজানো হয়েছে। যদিও এখনও পাঁকা কাঁঠাল বাজারে আসতে শুরু করেনি তারপরও এক মাস পরেই লোভনীয় কাঁঠাল ফলের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠবে স্থানীয় হাট-বাজার গুলো।
চিকিৎসকদের মতে, কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-ই, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড রয়েছে। টাটকা ফল পটাশিয়াম, ম্যাগনোশিয়াম এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস। পাঁকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাঁকা কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
মানিকছড়ি উপজেলার ঢাকাইয়া শিবির এলাকার বাগান মালিক মো. খলিলুর রহমান জানান, বাড়ির সংলগ্ন খোলা জায়গায় প্রায় ৭০-১০০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৫০- ১৫০টির কাঁঠাল এসেছে। বর্তমানে বাগানের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক।
গুইমারার কাঁঠাল ব্যবসায়ী আবাইমা মারমা জানান, প্রতি বছরই বাগান কিনার পাশাপাশি বাজার থেকে প্রতিদিনই কাঁঠাল কিনে তা দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে থাকি। তাতে বেশ লাভবান হই। আমার সাথে আরো বেশ কিছু লোক থাকে, যারা দৈনিক মজুরীতে কাজ করে। এতে তাদের আয়ের উৎস্য সৃষ্টি হয়।
মাটিরাঙ্গার আব্দুল খালেক জানান, গত বছরের চাইতে এবার কাঁঠাল বেশি ধরেছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বেশ ভালো দামে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
মৌসুমী কাঁঠাল ব্যবসায়ী মোঃ নেকবর আলী জানান, প্রতি বছরই বাগান মালিক থেকে অগ্রিম বাগান কিনে থাকি। এবারও প্রায় ২০-২৫টি বাগান কিনেছি। তবে অনেকে বাগানে মুচি আসার পরপরই বাগান বিক্রি করে দেন। টাকার প্রয়োজনে। তাই অধিক লাভের আশায় আগাম বাগান কিনেছি অনেক। আশা করছি গত বছরের তুলনায় এবার ভালো ব্যবসা করতে পারব।
এছাড়াও কাঁঠাল বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন ও পরিবহণ কাজে অসংখ্য লোক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পাশাপাশি বাগান মালিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়জিত সকলেই এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মোঃ সফি উদ্দিন জানান, এ জেলাতে প্রায় ৩ হাজার ১শ ৬ হেক্টও জমিতে কাঁঠালের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১শ ৮ হেক্টর বেশি। অনুকুল আবহাওয়ার কারণে গত বছরের তুলনায় একটি বেশি গাছে কাঠাল ধরেছে। তবে এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশ জুড়ে কদর বেশি। বাগান মালিক থেকে শুরু করে কেনা-বেচার কাজে জাড়িত অনেকেই আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশিংং চাষীদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।