অবশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইটভাটা বন্ধে মাঠে এখন প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট
মাহামান্য হাইকোর্ট এর আদেশ বাস্তবায়নে তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় পরিবেশবান্ধব সনদ ছাড়াই গড়ে তোলা ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ পুরো জেলা উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই কোন কোন ইটভাটা বন্ধ কিংবা তাদের মালিকপক্ষকে মোটা অংকের অর্থ জরিমানা করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর এর অনুমোদন ছাড়া ও প্রশাসনের জানা অজানার মধ্যেই গড়ে উঠা এসব ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর পরিবেশ ও মানুষে ক্ষতি করে গেলেও এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা জরিমানার বিষয়ে তেমন খবরই ছিল না স্থানীয় প্রশাসনের। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ প্রশাসনে নানান দেনদরবার এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়া ব্যবহার করেই তাদের ইটভাটার ব্যবসা চালিয়ে আসছে। কোন কোন ইটভাটা এভাবেই টানা ১০/১৫ বছর ধরেই ব্যবসা করছে এবং করে আসছে। ইটভাটাগুলো এভাবেই চলছে।
স্থানীয় জানসাধারনের অভিযোগ, তিন জেলার সদর সহ বিভিন্ন উপজেলা ও তার প্রত্যন্ত এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর এর আনুমোদন ছাড়াইয়া রীতিমত ইটভাটা গড়ে তুলেছে কিছু ব্যবসায়ী মহল। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি কর্ণপাত না করেই তারা এক পেশেভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি ইটভাটায় বছরে হাজার হাজার টন গাছ পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাটাগুলো যেমন পরিবেশ বান্ধব নয় তেমন জনবহুল এলাকায় ইটভাটা করাও অন্যায়। কিন্তু এসব অন্যায় থাকার পরেও স্থানীয় প্রশাসন তার বিষয়ে তেমন খোঁজও রাখতো না। পত্রিকায় মাঝে মধ্যে দু-একটি সংবাদ প্রকাশ হলেই তড়িঘরি করে দু-একটাকে জরিমানাতেই কাজ শেষ। ঠিক পরক্ষনেই আবারো একই চিত্রেই পরিচালিত হয়ে আসছে ইটভাটাগুলো। যার কারনে তাদের দেখা-দেখিতে নতুনরাও কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটা গড়ে তুলছেন। অথচ এসব ইটভাটগুলো ভেতরে ভেতরে বন জঙ্গলের একটি বিরাট অংশ গাছ পালাগুলো ভাটায় জ্বালাচ্ছে। ফলে দিন দিন বনের আকার ছোট হয়ে আসছে সেই সাথে অকালেই গাছের পরিসমাপ্তিও ঘটছে। এভাবেই বনের গাছ কমতে কমতে পরিবেশের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে নানান ভাবেই।
জেলার স্বাস্থ্য অধিপÍর বলছেন, পরিবেশ বান্ধব নয় এবং জনবহুল এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটাগুলোর ধোঁয়ায় পরিবেশেরতো ক্ষতি করছেই তার মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যহানি এবং নানান রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। জনবহুল এলাকার মধ্যে গড়ে উঠা ইটভাটার চুল্লির ধোঁয়া শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষে শরীলে প্রবেশ করে শ্বসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছে ঐ সব এলাকার মানুষ। তাছাড়াও ধোঁয়ায় শুধু পরিবেশেরও নয় বিভিন্ন কীট প্রতঙ্গ সহ পশু পাখিরও ক্ষতি হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ধীরে ধীরে চরম ভারসাম্যহীনতায় পড়ছে। মানুষের ব্যবসাবাণিজ্য এবং উন্নয়ন দরকার রয়েছে কিন্তু তাই বলে যে সব দিকেই ক্ষতি ডেকে আনবে এটাতো মানা যায় না। আনি থাকার পরও কেন সেভাবেই প্রশাসন এবং মানুষ চলবে না তার দায়িত্বতো প্রশাসনের। সুতরাং প্রত্যেক সেক্টরে বড় ধরনের ক্ষতিগুলো যেভাবে ধেঁয়ে আসছে তার থেকে উত্তোরণের জন্য প্রশাসনকে অবশ্যই কঠোর হতেই হবে।
দেখা যায় মহামান্য হাই কোর্ট সম্প্রতি এক আদেশে বলেছেন তিন পার্বত্য জেলায় অনুমোদন বিহীন এবং আইন বহির্ভুতভাবে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলো বন্ধ করে দেয়া। এসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশ এবং মানুষের চরম স্বাস্থ্য হানি ঘটাছে। হাই কোর্ট এর এ আদেশে তিন জেলার জেলা প্রশাসনগুলো যেন নড়েচড়ে বসেছে। এর পর থেকেই আদেশ পালনে জেলা প্রশাসন এবং তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেগণ রীতিমতন মাঠে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতদিনই কোন না কোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীন, পরিবেশ বিরোধী ইটভাটারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন কোন কোন প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধও করছেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকছে হাই কোর্টকে কেন আদেশ করতে হবে। এখানেতো প্রশাসনের কাছে এসব বিষয়ে আইন এবং তার প্রতিকার ও ব্যবস্থার বিষয়ে ক্ষমতা রয়েছে। কখন আদালত আদেশ করবেন তার অপেক্ষা না করে যেঠুকু আইন রয়েছে সেঠুকু দিয়েই ব্যবস্থা নেয়া হলে বর্তমানে মানুষ পরিবেশের উপর যে ক্ষতির চাপ পড়ছে তা হয়তো সেরকম হতো না।