[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

নদী রক্ষা কমিশনের আইনে দখলবাজদের গ্রেফতার সহ অর্থ দন্ডের আদেশ

কঠোর আইন আছে প্রশাসনও আছে বাস্তবায়নে অসহায় কার কাছে

৬০

॥ মিলটন বড়ুয়া ॥

এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ এবং মিঠা পানির হ্রদ খ্যাত কাপ্তাই হ্রদের পানির মিষ্টতা যেমন শেষের পথে তেমন অবৈধভাবে দখলে দখলে পরিবেশের তিক্ততাও এখন উচ্চতে। আইনে দেশের খাল, বিল, নদী, নালা, হ্রদ, হাওড় বাওড়, জলাশয়, ঝিড়ি, ঝর্ণার জায়গাগুলো জনসম্পত্তি বলা হলেও অর্থ ও ক্ষমতাবান কিছু জনশক্তি এসব জনসম্পত্তিকে লুটে পুটেই দখলে নিচ্ছে। ঠিক এভাবেই রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের জায়গা লাগাতারই দখলে দখলে এখন সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। যেভাবে দখল হয়ে গেছে তাতে অনেকটা সেচ্ছা যাযাবরদের দখলে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা। অথচ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (২০২০) আইনে অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা ব্যতীত গ্রেফতার ও অর্থ দন্ডের কঠোর আদেশ রয়েছে। তাই সচেতনরা স্থানীয় আদালতের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।

দেখা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৬০-৬৪ সালের মধ্যে বর্তমান কাপ্তাই উপজেলায় বাঁধ দেওয়ার পর রাঙ্গামাটি জেলার বিস্তৃত এলাকা মিলে ৭শত ২৫ বর্গ কিলো মিটারের হ্রদ সৃষ্টি হয়। এ বাঁধের কারনে পানির নিচে চলে যায় তৎসময়ে চাকমা রাজবাড়ি ছাড়াও হাজার হাজার পরিবারও তাদের কৃষি জমিসহ উদ্ভাস্তু হয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে কাপ্তাই বাঁধকে ক্ষুদ্র-নৃজাতিগোষ্ঠিরা পাহাড়ের কান্না বলে জানেন। তবে এ বাঁধের কারনে একটি হ্রদের সৃষ্টি যেমন হয়েছে তেমন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এটিকে বৃহৎ মিঠা পানির হ্রদ বলেও অনেকে জানেন। হ্রদ সৃষ্টির সাথে সাথে মাছের একটি বড় ভান্ডারের সৃষ্টিও হয়। এ হ্রদ নির্ভর শতের অধিক ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার জেলে মাছ শিকার করেই জীবন ধারন করে চলেছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এর অধীন বৎসরে রাজস্ব আয়ও হচ্ছে এখন কোটি কোটি টাকা। অনেকেই বলেন কাপ্তাই হ্রদ বহুজনের কান্না হলে আবার বহুজনের হাসি আর উন্নয়নও বটে। আবার হ্রদকে কেন্দ্র করে পর্যটনের শহর হিসেবে সেদিকেও উন্নয়নের একটি বড় অংশ যোগ হয়েছে।

সরে জমিন প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদ আর বৃহদাকারেই নেই। বছরের পর বছর অবৈধভাবে হ্রদের জায়গা দখল করতে করতে সংকুচিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে হ্রদের জায়গা দখলে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে প্রতিযোগীতাই চলছে। রাজনৈতিক আর অর্থ শক্তি দিয়ে আইন আদেশকে অমান্য করে সরকারি আর বেসরকারি অনেক দল এই কাজে জড়িত। এইসব অপশক্তিগুলো গত কয়েক বছরে হ্রদের জায়গা দখল করে ইয়া বড় বড় দালান তুলেই চলেছে। এসব বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার দাপুটেও যেভাবে প্রতিযোগীতা মূলক দখল করে চলেছে অনেকটা ক্ষমতাধর সেচ্ছা যাযাবরদের দখলে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা। আবার অনেকেই বিভিন্ন দলের ছত্রছায়া ব্যবহার করেও হ্রদের জায়গা দখল করেছে। জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে কাপ্তাই হ্রদের (নদী) পথে যাতায়াত করলেই দেখা যায় কিভাবে জায়গা বা হ্রদের পাড়গুলো দখল হয়ে গেছে। আর সেখানে বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনাতো ফেলছে সব চেয়ে বিশ্রি দেখার বিষয় হলো সেপটিক ট্যাংকগুলো যেভাবে বসানো হয়েছে ভরা মৌসুমে পানিতেই নিমজ্জিত থাকে। পৌরসভার নের্তৃত্ব এবং কর্তৃপক্ষ সব জেনেও আমলে না নেয়ায় দেশী বিদেশী অর্থের অপচয়ই হচ্ছে।

দেখা যায়, শহরের রিজার্ভ বাজার, এসপি অফিস, তবলছড়ি, কাঠালতলী, আসামবস্তী সহ ইত্যাদি এলাকার হ্রদের পার জোরজবরদস্তী দখল করেই চলেছে। খোদ শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পাশে হ্রদের জায়গা দখল করে দুটি পাকা দালন উঠেগেছে অনেকটা প্রশাসনের স্বগোচরেই। একইভাবে রিজার্ভ বাজারস্থ আব্দুল আলী একাডেমী ও তার আশাপাশ এলাকায় হ্রদের তলদেশ থেকে ইয়া বড় পাকা স্থাপনা উঠেগেছে। হ্রদের জায়গা নিয়ে বহু ক্ষমতাধর নামে বেনামে অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হয়ে গেছে, এখনো হচ্ছে। আসামবস্তী-তবলছড়ি সংযোগ সড়কের পাশে হ্রদের তলদেশ ভরাট করে অনেক বাসা বাড়িও নির্মাণ হয়ে গেছে। হ্রদের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় তবলছড়িস্থ কালিবাড়ীর সামনে সড়ক বিভাগের করা কোটি টাকার ব্রীজটি এখন অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ তবলছড়ি বাজার এলাকা থেকে আসামবস্তী যাবার দ্বিতীয় উপায় ছিল হ্রদের উপর দিয়ে তখন নৌকার চেয়ে সাম্পানের চাহিদা ছিল বেশী। কিন্তু সেখানে এখন আর নৌকা, সাম্পান চলেও না। ঠিক এভাবেই বছরের পর বছর হ্রদের জায়গা দখল হতে হতে এখন আর হ্রদকে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটারের বলা যাবে না। অন্যদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আদেশে দেশের খাল, বিল, হ্রদ, নদী, নালা, জলাশয়, ঝিড়ি, ঝর্ণার জায়গাগুলো জনসম্পত্তি বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসব সম্পত্তির অনেক এখন দখলবাজদের দখলেই চলে গেছে এবং যাচ্ছেই। কাপ্তাই হ্রদের জায়গাও দখলে অনেকটা প্রতিযোগীতা চলছে, অন্যের পাশাপাশি খোদ সরকার দলের অনেকেও প্রকাশ্যে হ্রদের জায়গা অর্থাৎ এসব জনসম্পত্তিগুলো লুটেপুটে দখলে নিচ্ছে।

অপর দিকে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহ বিশেষ করে রাঙ্গামাটি পৌরসভাও তাদের নগর উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকা উন্নয়ন করতে গিয়ে তারা খোঁজ খবরও নেননি যে হ্রদের জায়গা দখল করে বসতি স্থাপন করেছে। অনেকেই রাজনৈতিক নানান সুবিধা আদায় করতে গিয়ে অবৈধকে বৈধ বানিয়ে নগর উন্নয়ন দেখিয়েছে। দেশী বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থে এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো অব্যবস্থাপনার কারনে অদুর ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারণ হয়েই দাঁড়াবে। হ্রদ এলাকার জায়গা দখলকারী ও বসতবাড়ির মালিক তাদের সেপটিক ট্যাংক বসিয়েছে কোথাও কোথাও হ্রদের ধারে আবার কোথাও কোথাও তলদেশে। জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে নগর উন্নয়নের নামে এক সময়ে পৌরসভা কর্তৃক প্রদত্ত স্যানিটারী ল্যাট্রিনগুলোর ট্যাংক হ্রদের পানি শুকালে ভেসে উঠে আর বাড়লে থাকে পানির ভিতরে। পরিবেশ সচেতন অনেকেই বলছেন হ্রদের স্বচ্ছ পানি এখন আর সেই স্বচ্ছ নেই, ময়লা আবর্জনা ফেলতে ফেলতে দুষিত হয়ে গেছে। এদিকে বছর তিনেক আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কাপ্তাই হ্রদের পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে একটি সেমিনার করেছিলেন কিন্তু সেটি পরে আর আলোরমুখও দেখেনি। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থান তথা গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে বিশুদ্ধ পানির সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের ওয়াসা বড় আকৃতির ফাইপ দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ-কর্ণফুলীর নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে শহরে।

এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটি জেলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় হ্রদের জায়গা অবৈধভাবে দখল করেছে এমন তালিকা প্রকাশ করেছে। সুত্র জানায়, জলাশয় জলাধার অবৈধভাবে দখল করায় এ তালিকায় রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায় ২২জন, কাপ্তাই ৮ জন এবং রাজস্থলীতে ২১ জনসহ ৫২জনের নাম রয়েছে। এ বিষয়ে সচেতন মহল দাবি করেছেন প্রকৃতপক্ষে হ্রদের জায়গা দখলে হাজারের অধিক দখলবাজ রয়েছে। নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অনেক বড় বড় ব্যক্তির নাম আসেনি। জানা গেছে, সম্প্রতি শহরের তবলছড়ি এলাকায় একটি ক্লাব ঘর হ্রদের তলদেশ থেকে নির্মাণ করতে গিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা ভুমি কার্যালয়ের নোটিশের কারনে নির্মাণ কাজ বন্ধ কিন্তু স্থাপনা সরানোর আদেশ থাকলেও সে আদেশ অমান্য করছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। অপর দিকে, বছরের পর বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল হয়ে আসলেও স্থানীয় এবং উপজেলা প্রশাসনগুলো কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেই অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে দু একটি সংবাদ প্রকাশ হলে তড়িঘরি করে নোটিশ দিয়েই কাজ শেষ। পরে কি ব্যবস্থা হলো তার হদিসও থাকে না।

এদিকে হ্রদের জায়গা দখল বিষয়ে সম্প্রতি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিল্পী রাণি রায় এর সাথে সাক্ষাৎ করা হলে তিনি বলেন, হ্রদের জায়গা দখল করেছে এমন ব্যক্তিগুলোর সেরকম তালিকা নেই তবে উপজেলা পর্যায়ে তালিকা করতে নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আদেশে দেশের খাল, বিল, নদী, নালা, জলাশয়, ঝিড়ি, ঝর্ণা, সমুদ্র উপকুল, হাওড়,বাঁওড়, হ্রদ’র জায়গাগুলো জনসম্পত্তি এসব সম্পত্তি বন্দোবস্ত বা লিজ দেয়া যাবে না আর দিয়ে থাকলেও উভয়ই বাতিল করতে হবে এমন আদেশ প্রশাসন পায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন এবং পরিবেশবাদীরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল হতে হতে এখন নির্দিষ্ট আয়তনের মধ্যে নেই। পানি শুকালেই দেখা যায় হ্রদকে কিভাবেই দুষণ করে চলেছে। নগর উন্নয়নের নামে শহর এলাকায় একসময়ে পৌরসভার দেয়া স্যানিটারী টয়লেটের স্যাপটিক ট্যাংকগুলো হ্রদের ধারে বসানো হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটিতে পানির একমাত্র উৎস হলো কাপ্তাই হ্রদ। অথচ বৃহৎ উৎসটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে, সব চেয়ে বড় বিষয় হলো হ্রদের পানিকে এখন আর স্বচ্ছ বলা যাবে না। নানান অত্যাচারে পানি দুষণ হচ্ছে এবং হয়ে যাচ্ছেই। এ বিষয়ে প্রত্যেকের যেমন ভাবা দরকার তেমন কঠোর ব্যবস্থারও দরকার। কাপ্তাই হ্রদের জায়গা অবৈধভাবে দখল হলেও তাৎক্ষনিক কঠোর ব্যবস্থা তেমন দেখা যায় না। অথচ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (২০২০ইং) আইনে পরোয়ানা ছাড়াই দখলবাজদের গ্রেফতার সহ মোটা অংকের অর্থ দন্ডের আদেশ করার অধিকার রয়েছে।