স্মৃতিসৌধটিও অযত্ন অবহেলা আর অরক্ষিত অবস্থায়
বান্দরবানের থানচিতে শোকাহত পরিবারগুলো কেমন আছেন?
॥ চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি ॥
সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে এখনো গা শিউঁরে ওঠে। মানুষের কান্না আত্মচিৎকারে আশপাশের মানুষগুলোও ছিল হতভম্ব। কিন্তু এখন ক’জনইবা মনে রেখেছেন বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদর থেকে বলিপাড়াস্থ ১১ কিঃমিঃ শিলাঝিড়ি (সংরেক্ষ্যং) নামক স্থানে ২০১২ সালে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার কথা। নিহতদের পরিবারগুলোও কেমন আছেন। অথচ ১৭ জন নিহতদের স্বরণে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে মোজাইক করা স্মৃতিসৌধটিও অযত্ন অবহেলা আর অরক্ষিত অবস্থায়। এটিও যেন দেখভালের দায়িত্বে কেউ নেই।
এদিকে একই বছরে উপজেলা প্রশাসনে আয়োজনে মাসিক সমন্বয় সভাতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বিশেষ বিবেচনায় থানচির ইতিহাসে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বড় ঘটনা। এতে ১৭ জনের নিহত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা আমলে নেন। একই বছরে অর্থাৎ ২০১২ সালে প্রশাসনে অর্থায়নে সড়ক দুর্ঘটনা নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ১৪ জানুয়ারী শনিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় থানচি থেকে বান্দরবান সদরে উদ্দেশ্যে যাত্রা করে একটি যাত্রীবাহী বাস। থানচি সড়কে ১১ কিঃমিঃ শিলা ঝিড়ি (সংরেক্ষ্যং) নামক স্থানে পৌচ্ছালে যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রায় ৩শত মিটার গভীরে ঝিড়ির খাদে পড়ে যায়। এই সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের সদর ইউনিয়নের সভাপতি উহ্লাচিং মারমা, তার দৌহিত্র দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে বেঁচে যান। ঘটনাস্থলে ১৭ জন নিহত ও বাস চালকসহ ১৪ জনের আহত হন। যা থানচির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শোকাবহ ঘটনা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে ফেসবুক পোষ্টে বাবা, ছোট বোন ও নিহতদের সকলে আত্মার শান্তি কামনা করেন বাবা হারার বড় সন্তান উবাহাই মারমা। তিনি পোষ্টে লিখেন, আমার স্বর্গীয় বাবা ও স্নেহের আদুরে ছোট বোন কিকিনু’র আজ ১০তম মৃত্যু বার্ষিকী। ২০১২ সালে ১৪ জানুয়ারী এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা আর ছোট বোনকে হারিয়েছি। তাই ১৪ জানুয়ারী আমাদের পরিবারের জন্য এই দিনই স্মরণীয় কষ্টদায়ক একটা দিন। মন্দিরে পূজা ও প্রার্থনা করলাম। তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, বিগত ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় কবলিত পড়ে নিহতদের স্মরণের নির্মাণ সেই স্মৃতিসৌধটি বছরে পর বছর ধরে অবহেলিত, ময়লা অবর্জনা ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় এখন স্মৃতিসৌধটির আশপাশ জঙ্গলে পরিনত রয়েছে। স্মৃতিসৌধটি সুরক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছেনা।
থানচি হেডম্যান পাড়া বাসিন্দা ডথুইনু মারমা বলেন, সেদিন বাবাসহ আমরা দুই বোনের গোপালগঞ্জ স্কুলে পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে সকাল ৭টায় থানচি থেকে বান্দরবানে রওনা দিয়েছিলাম। আমি গুরুত্বর আহত হয়ে বেঁচে গেলেও ছোট বোন ও বাবা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। তিনি আরো বলেন, এই সড়কে যখনি বান্দরবান থানচি আসা যাওয়ার করি তখনি এ স্মৃতিসৌধ দেখলে বাবা ও আদরের ছোট বোনের কথা মনে পড়ে। কেঁদে কেঁদেই যেতাম।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী বলেন, এই স্মৃতিসৌধ ইতিহাসটি জেনেছি। এরই মধ্যে স্মৃতিসৌধটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভাতে উস্থাপন করে স্মৃতিসৌধটি আরো উন্নত ও নিহতদের নাম খুঁজে তাদের নামে একটি নামফলক বোর্ড তৈরী করার চেষ্ট করবো।