[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের ৫দিনব্যাপি বিজ্ঞপাখি মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাড়ির সদস্যদের অজ্ঞান করে দূর্ধষ চুরিগুণগত শিক্ষা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারবে: রাঙ্গামাটিতে জলখেলি অনুষ্ঠানে সুপ্রদীপনৃ-গোষ্ঠীর আগে ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না: জলকেলীতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপবান্দরবানের আলীকদমে মার্মা সম্প্রদায়ের মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ-২০২৫ উৎসব পালনপুরোনো দিনের গ্লানি মুছে যাক সাংগ্রাইয়ের মৈত্রীময় জলেবান্দরবানের থানচিতে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের গুড ফ্রাইডের উপহার দিলেন সেনাবাহিনীদীঘিনালায় রাতের আধাঁরে পাহাড় কাটার অভিযোগে ২লাখ টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির রামগড়ে গরু ঘাঁস খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ৮অক্সিজেনের অভাবে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ মাস বয়সের শিশুর মৃত্যু
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

মানিকছড়ির আমেনা পেলেন জেলার নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করা নারী জয়িতার পুরস্কার

৭১

॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় “নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করেছেন যে নারী” ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে জয়িতা নির্বাচিত হয়ে সংবর্ধিত হয়েছেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ছুদুরখীল অজপাড়া গ্রামের মফিজ মিয়ার মেয়ে আমেনা আক্তার।

গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও জয়িতাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ক্রইসাঞো চৌধুরী, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সফল জননী নারী হিসেবে ইন্দিরা দেবী চাকমা, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নিপু ত্রিপুরা, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় নমিতা চাকমা, শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে মাচিচিং মারমাকে জয়িতা হিসেবে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, স্বামী পরিত্যাক্তা আমেনা আক্তার খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ ছুদুরখীল এলাকার দরিদ্র কৃষক মফিজ মিয়া ও মোর্শেদা বেগমের মেয়ে। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারনে নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে গত বছরের শুরুতে কলেজে পড়াবস্থায় পরিবারের ইচ্ছেতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে তাকে। কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় তাঁর (আমেনা)। বেকার স্বামীর নানা চাহিদা মেটাতে তার বাবার বাড়ি থেকে নানা সময়ে টাকা পয়সা নিয়ে আসতে বাধ্য করার পাশাপাশি চালায় নির্যাতনও! এক সময় স্বামী ও তার পরিবারের শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। নানা কারণে স্বামীল সাথে তার সম্পর্কের ইতি টানেন। চালিয়ে যান নতুন করে জীবন সংগ্রাম। নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে গ্রামের বাড়ি ছুদুরখীল থেকেই নিজ উদ্যোগেই সফলতার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। যার ফলে প্রচল ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে শুরু করেন নিজের হাতে তৈরি আচারের ব্যবসা। “নিজে বলার মতো একটি গল্প” ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহারের সহযোগিতায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শে উপজেলা তথ্য অফিস সহযোগিতায় নতুন সংযোজনের মাধ্যমে বাড়তে থাকে ব্যবসার পরিধি। ফেসবুক পেইজ ‘বাঙ্গালীয়া’র মাধ্যমে নিজের তৈরী আচারসহ বিভিন্ন পণ্য অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিতে থাকেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সুনামের পাশাপাশি বাড়তে শুরু করে তার ব্যবসার পরিধি। তৈরি করে নিয়েছেন গ্রাহকের আস্থা ও বিশ^াস।

তিনি দীর্ঘ ১ বছর চেষ্টা আর কঠোর পরিশ্রমে ফলে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন নিজেকে। বর্তমানে সিজনাল আচার, বালাচাও, হলুদের গুড়ো, হলুদের শুট তৈরি করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর পাশাপাশি পার্সেলের মাধ্যমে বিদেশেও পাঠিয়ে থাকেন তিনি। এতে যেমন নিজে স্বাভলম্বী হয়েছেন, তেমনি অনুপ্রেরণা বর্তমানে অনেক নারীর। বর্তমানে নিজ খরচে চলছে তার পড়াশুনোও।

জয়িতা আমেনা আক্তার’র কাছে তার জীবন সংগ্রামের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, একটা সময় অনেক বড় হওয়ার স্বাপ্ন দেখতাম। কিন্তু অভাব অনটনের কারণে পড়াশুনো বেশি দূর চালিয়ে যেতে পারিনি। বসতে হয় পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে। সেখানেও দুঃখ-দুর্দশার শেষ ছিল না। স্বামী ও তার পরিবারের নানা নির্যাতনে স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে আসি বাবার বাড়িতে। সেখানে থেকে ইউটিউবে নানা প্রকার আচার বানানো দেখে নিজেই বানাতে শুরু করি। যখন দেখছি আমি আচার বানাতে পারছি ঠিক তখনই নিজের পরিচিত আর আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিক্রি শুরু করি। তারা জানালো বেশ ভালই হয়েছে। তারপরও স্বাপ্ন দেখি বাণিজ্যিকভাবে করতে। ধীরে ধীরে শুরু করি আচারের অনলাইনে বিক্রি। বর্তমানে সকলে সহযোগিতায় মোটামুটি ভালোই সফল হয়েছি। আমার আশা আগামীতে আরো বড় পরিসরে করব। তবে আমার দীর্ঘদিনের চেষ্টা আর পরিশ্রম আমাকে আজ সফলতার কাছে নিয়ে এসেছে। জয়িতা সম্মাননাও পেয়েছি। সরকারি সহায়তা পেলে আরো ভালো কিছু করতে পারব ইনশাল্লাহ। সমাজের অবহেলিত নারীদের প্রতি তার বার্তা কি? জানতে চাইলে তিনি জানান, যারা স্বামী কিংবা পারিবারিকভাবে অবহেলিত তারা যদি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তাহলে ঘরে বসে না থেকে আত্মকর্মসংস্থা সৃষ্টি করেন। কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে কাজ করেন, নিশ্চই আপনি সফল হবে। তবে সফলতা আসতে সময় আর নানা প্রতিবন্ধকতা থাকবে তবে থেমে গেলে সফল হবেন না। তাই যতই বাধা আসুক না কেন লক্ষ স্থীর ঠিক রাখবেন সফলতা আপনার আসবেই।