খাগড়াছড়িতে তিন দিনব্যাপী রাজ পূণ্যাহ উৎসব শুরু
॥ দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়িতে ঐতিহ্যবাহি মং সার্কেলের রাজ পূন্যাহ উৎসব শুরু” হয়েছে। জুম চাষের বাৎসরিক খাজনা আদায়ের জন্য রাজ পরিবার এ উৎসব আয়োজন করে।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে রাজ বাড়ীর মাঠ প্রাঙ্গণে তিনদিন ব্যাপী ৭ম বারের মতো রাজপূণ্যাহ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাগড়াছড়ির সাংসদ ও ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেছেন, রাজকীয় ঐতিহ্য, রীতি রেওয়াজ এবং আচার-অনুষ্ঠান ধরে রাখার বিষয়ে বর্তমান সরকার খুবই আন্তরিক। সরকার তিন পার্বত্য জেলার রাজা, হেডম্যান, কার্বারী এবং রোয়াজাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছে। পাহাড়ের মানুষের উন্নয়নের জন্যও পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এসোসিয়েশন এর সভাপতি কংজরী চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিনিয়া চাকমা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শানে আলম, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়নের প্রতিনিধি, ইউএনডিপি।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় পোষাক পরিধান করে রাজবাড়ী থেকে অনুষ্ঠান স্থলে নেমে আসেন মং সার্কেল প্রধান সাচিংপ্রু চৌধুরী। এ সময় তার সৈন্য-সামন্ত, উজির-নাজির, সিপাহী শালাররা রাজা বাহাদুরকে গার্ড দিয়ে মঞ্চস্থলে নিয়ে আসে। মং রাজা সিংহাসনে উপবিষ্ট হলে সারিবদ্ধ ভাবে ৮৮টি মৌজার হেডম্যান, ৭ শতাধিকেরও বেশি কারবারী, রোয়াজারা উপঢৌকনসহ জুমের খাজনা প্রদান করেন। মৌজার হেডম্যান কারবারীরা রাজাকে কুনিশ করে জুম কর (খাজনা) ও উপঢৌকন রাজার হাতে তুলে দেন।
রাজপূন্যাহ উৎসবে খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার ৮৮ টি মৌজা নিয়ে গঠিত মং সার্কেলের হেডম্যান, কারবারী ও প্রজারা উপটৌকনসহ ফসল ও ভূমির বার্ষিক খাজনা (কর) প্রদান করেন।
মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেছেন, রাজ সিংহাসন আর রাজকীয় ঐতিহ্য নেই। তবে রাজকীয় রীতি রেওয়াজ ও সংস্কৃতি এখনো চালু রয়েছে। এই ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে বাৎসরিক খাজনা আদায় উৎসব রাজপূণ্যাহ মেলা। প্রজাদের উদ্দেশ্যে এই মেলা ব্যাপকভাবে আয়োজন করলেও এবছর করোনার কারণে তা সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। তাই আদিবাসীদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা চান রাজা বাহাদুর।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি কৃষ্ঠি-কালচার রক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিক। রাজপূণ্যাহ উৎসব শুধু খাজনা আদায়ের অনুষ্ঠান নয়, রাজপূণ্যাহ পাহাড়ী-বাঙ্গালীর একটি মিলন ক্ষেত্র। এই উৎসবে মং সার্কেলের ৮৮ টি মৌজার হেডম্যান, ৭শতাধিকেরও বেশি কারবারী, রোয়াজারা উপঢৌকনসহ জুমের খাজনা প্রদান করে রাজা বাহাদুরের আনুগত্য স্বীকার করেন।
রাজপূণ্যাহর দ্বিতীয় দিন শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বার্ষিক রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে মং সার্কেল প্রধান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী দিনভর ৮৮টি মৌজার প্রধান বা হেডম্যান এবং ৭০১ পাড়াপ্রধানের (কার্বারি) কাছ থেকে খাজনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন গ্রহণ করবেন। এছাড়াও হেডম্যান ও কার্বারিদের সঙ্গে দিনব্যাপী মতবিনিময় করবেন রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী।
রাজপূণ্যাহর তৃতীয় দিন রোববার (১২ ডিসেম্বর) নারী হেডম্যান ও নারী কার্বারিদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ বাসন্তী চাকমা। মং রানী উখ্যেংচিং মারমা (চৌধুরী) অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। আনুষ্ঠানিকতায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা এবং ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।