[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫শিক্ষার্থীর মধ্যে লংঙি ম্রো বান্দরবান উপজেলা আলীকদমেরখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই কোচিং সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই বসতবাড়ি আগুনে ভষ্মিভুতদীঘিনালায় গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের ৫দিনব্যাপি বিজ্ঞপাখি মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাড়ির সদস্যদের অজ্ঞান করে দূর্ধষ চুরিগুণগত শিক্ষা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারবে: রাঙ্গামাটিতে জলখেলি অনুষ্ঠানে সুপ্রদীপনৃ-গোষ্ঠীর আগে ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না: জলকেলীতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপবান্দরবানের আলীকদমে মার্মা সম্প্রদায়ের মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ-২০২৫ উৎসব পালনপুরোনো দিনের গ্লানি মুছে যাক সাংগ্রাইয়ের মৈত্রীময় জলেবান্দরবানের থানচিতে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের গুড ফ্রাইডের উপহার দিলেন সেনাবাহিনী
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

২৪ বছরেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি

৯০

॥ পলাশ চাকমা ॥

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। কিন্তু ২৪ বছরেও পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান অর্জিত হয়নি। বৃহস্পতিবার (০২ডিসেম্বর) সকালে রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত পার্বত্য চুক্তির ২৪তম বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ডাঃ গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মে চিং মারমা, বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টির চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড অশোক সাহা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানু মারমা হিন্দু বেীদ্ধ খৃষ্টান এক্য পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কুশল চৌধুলী, বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টির রাঙ্গামাটির জেলা শাখার সদস্য সৈকত রঞ্জন চৌদুরীসহ অংগ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ সরকার গত ২০০৯ সাল থেকে ১৩ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও বর্তমান সরকার পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কোন কার্যকর পদক্ষেপ তো গ্রহণ করেইনি, অধিকন্তু গোয়েবলসীয় কায়দায় অব্যাহতভাবে অসত্য তথ্য প্রদান করে চলেছে। চুক্তি বাস্তবায়নে নিজেদের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে বর্তমান সরকার ১৩ বছর ধরে অসত্য ও একতরফা তথ্য প্রচার করে আসছে যে, চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত ও ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। অথচ পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৮টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট ২৯টি ধারা সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে এবং সরকার এসব ধারা অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

বক্তারা আরো বলেন, সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো বিশেষ শাসনব্যবস্থার অধীনে প্রবর্তিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তি-পূর্ব অবস্থার মতো এসব বিষয়সমূহ এখনো জেলার ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। ফলে বিগত ২৪ বছরেও পার্বত্য সমস্যার কাঙ্খিত রাজনৈতিক সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, পার্বত্য সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদিসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করা।

বক্তারা আরো বলেন, নির্বাচন বিধিমালা ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা বিধিমালা প্রণয়ন পূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন করা ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বেদখল হওয়া জায়গা-জমি জুম্মদের নিকট ফেরত দেয়া, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের তাদের স্ব স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা, অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিল করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ করা, চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে ১৮৬১ সালের পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন, ১৯২৭ সালের বন আইন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন, এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সেটেলার বাঙালিদের সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান করা ইত্যাদি।

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মতো সামরিক উপায়ে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের নীতি অনুসরণ করে চলেছে। তদুদ্দেশ্যে কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ২০টির অধিক ক্যাম্প পুন:স্থাপন করা হয়েছে এবং পূর্বের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচে জুম্ম জনগণের উপর ফ্যাসীবাদী কায়দায় সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত’ হিসেবে পরিচিহ্নিত করার জন্য ব্যাপক অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জুম্ম জনগণের উপর সেনা অভিযান, ঘরবাড়ি তল্লাসী, গ্রেফতার, ক্রশফায়ারের নামে বিচার-বহির্ভুত হত্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের, অনুপ্রবেশ, ভূমি বেদখল, চুক্তি বিরোধী অপপ্রচার ইত্যাদি মানবতা ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।