ধর্ষণের ৭২ ঘন্টার পর মামলা না নেয়ার আদেশে বিস্মিত নারী সমাজ
সম্প্রতি ঢাকার একটি আদালতে রাজধানী বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় রায় এর পাশাপাশি ধর্ষণের ৭২ ঘন্টার পর মামলা না নেয়ার জন্য পুলিশকে দেয়া আদেশ নারী সমাজকে যেমনি ভাবিয়ে তুলেছে তেমনি নারীর অধিকার এং সম্মানের বড় ধরনের আঘাত হয়েছে বলে দেশের নারী সমাজ তথা রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দাবি করেছে। সেই সাথে এ আদেশ বিচার বিভাগের উপর নারী সমাজের ক্ষোভের সঞ্চার করে দেয়া হয়েছে। এ আদেশের পর দেশের নারী সমাজ এখন রাস্তায় আন্দোলনও শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে রাজধানী বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় গত ১১ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত রায় দিয়েছে। রায়ে অভিযুক্ত ৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়ার পাশাপাশি আদালত ধর্ষণের ৭২ ঘন্টা পর মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশনাও দিয়েছে। এ নির্দেশনাকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন আদালতের উক্ত রায় ও নির্দেশনা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে তাৎক্ষণিক গণমাধ্যমে প্রেস বিবৃতিও দিয়েছে। গত ১২ নভেম্বর শুক্রবার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি আদালতের রায় ও নির্দেশনার বাতিল দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে বিচারহীনতা চরমে পৌঁছেছে। রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেসহ পাঁচ আসামিকে আদালত যেভাবে বেকসুর খালাস ও ধর্ষণের ৭২ ঘন্টা পর মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে এর মাধ্যমে দেশের বিচারকার্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
অপর দিকে এ রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানেও নারী সমাজ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথের দেশে বুদ্ধিজিবী সমাজও বিচলিত হয়ে পড়েছেন। মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ আইনজ্ঞ এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এ রায়ে ক্ষব্ধ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বলছেন এটি সরকারের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন হয়েছে। যেখানের নারীর সম্মান অধিকার নিয়ে সরকার সোচ্চার সেখানে ধর্ষণ ঘটনার মামলার রায় এবং ধর্ষনের ৭২ ঘন্টার পর মামলা না নেয়ার আদেশকে বিচার বিভাগের সম্মানের উপরও আস্থার সংকট তৈরী করবে। তাই স্ভাভতই প্রশ্ন উঠছে আইন-আদালতের মাধ্যমে সরকার একদিকে বিত্তশালীদের রক্ষা করছে, অন্যদিকে নারী, শিশু ও দুর্বল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ধরনের রায় নিতান্তই উদ্বেগের। আদালত ধর্ষণের ৭২ ঘন্টা পর মামলা না নেওয়ার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা নারীদের সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো বেশি অন্তরায় সৃষ্টি করলো। এমনিতে দেশে নারী নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনারই কোন সুষ্ঠ বিচার হয় না। আদালতের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ-নির্যাতন ও বিচারহীনতার মুখে পড়বে। আদালতের দেওয়া ধর্ষণের ৭২ ঘন্টা পর মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা বাতিল করতে হবে এবং রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলা পূনঃ তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।