[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

মুকুল কান্তি ত্রিপুরা ও তাঁর আর্ট স্কুল

৪২

॥ খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি ॥

বাকি দশটা ছেলের চেয়ে তিনি একটু অন্যরকম। তাই সমাজের কিছু লোক বাঁকা চোখে দেখলেও এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। নিজের স্বপ্নপূরণের পথে ছুটছেন প্রতিবন্ধী মুকুল। ছোটবেলা থেকে যে চিত্রাঙ্কনে বুদ থাকতো তা ইতোমধ্যে তাকে এনে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষগুলোও তাকে নিয়ে এখন গর্বিত। এলাকার অসহায় ও গরিব শিশুদের চিত্রাঙ্কনে আলোকিত ও গর্বিত শিক্ষক তিনি।

বলছি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম মায়াফা পাড়ার মহেশ ত্রিপুরা ও নীর কান্তি ত্রিপুরার ছেলে মুকুল কান্তি ত্রিপুরার কথা। মুকুল কান্তি ত্রিপুরা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি জন্মগতভাবেই খর্বাকৃতির। তার উচ্চতা ৪ ফুট ২ ইঞ্চি। জুম চাষি কৃষক পিতার ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট কৃতি সন্তান মুকুলের বেড়ে ওঠা হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতায়। শিশু অবস্থা থেকে চিত্রাঙ্কনের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল মুকুলের। দীঘিনালার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণিতে উপজেলা পর্যায়ে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান তিনি। পরে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন মুকুল।

সেখানে চার বছর ধরে লেখাপড়াসহ চিত্রশিল্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ হয় তার। চিত্রশিল্পী রিগেন চাকমার কাছ থেকে ছবি আঁকার ওপর প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন মুকুল। তার আঁকা ছবিগুলো একটা পর্যায়ে মানুষের প্রশংসা কুড়ায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের আগেও মুকুল অনায়াসে আঁকতে পারতেন যেকোনো ছবি। এঁকেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তি, খরা, বন্যা আর দুর্ভিক্ষের নানা ছবি। পছন্দ হওয়ায় অনেককে উপহার হিসেবে দিয়েছেন তার আঁকা ছবি।

এ প্রজন্মের শিশুদের তার মত করে ছবি আঁকায় পারদর্শী করে তুলতে এখন তিনি নিজ গ্রামের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘরের পাশে স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও উপজেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘মুকুল আর্ট’ স্কুলে বিনা পয়সায় চিত্রাঙ্কন শেখাচ্ছেন। চিত্রাঙ্কন শিখতে পেরে তাতে খুশি শিশুরাও। তার শেখানোতে এলাকার কিছু শিশু ভালো মানের ছবিও আঁকতে পারে। গ্রামের বাসিন্দারাও গর্বিত মুকুলের এমন উদ্যোগে।

চিত্রশিল্পী মুকুলের শিল্পের কদর রয়েছে জেলাজুড়ে। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি পড়াশুনাটাও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এবার দীঘিনালার কুজেন্দ্র মল্লিকা মডার্ন কলেজের মানবিক বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে তিনি। খাগড়াছড়ির সাংসদ ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেমের সহায়তায় ইতোমধ্যে মুকুলকে একটি আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠা করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরও পেয়েছেন তিনি। আর্ট স্কুলেই গ্রামের শিশুদের বিনামূল্যে চিত্রাঙ্কন শেখায় মুকুল। বর্তমানে তার আর্টস্কুলে শিক্ষার্থী আছে ৫৪জন। তাদের মধ্যে মেয়ে ২৯জন, ছেলে ২৫জন।

 

দীর্ঘ আলাপের সময় ‘মুকুল কান্তি ত্রিপুরা’ এ প্রতিনিধিকে বলেন, ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকার প্রতি আমার নেশা ছিল। এখন নিজ গ্রামের শিশুদের আমি ফ্রিতে চিত্রাঙ্কন শেখাই। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর্ট শিক্ষক হিসেবে কাজ করি। আর কয়েকটা টিউশন করি। এসব করে যা পাই তা দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ আর পরিবারে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। সবার সহযোগিতা পেলে আমার মতো প্রতিবন্ধী, গরীব, অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারবো। একটি আর্ট স্কুল করার স্বপ্ন, তা খাগড়াছড়ির এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা স্যারের সহযোগিতায় হয়েছে।এখন থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আর্ট শিখতে আরো উৎসাহ পাবে।

দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী পিপাসা ত্রিপুরা জানায়, গত দুই বছর ধরে মুকুল স্যারের কাছে আমি আর্ট শিখি। সপ্তাহে দুইদিন করে ক্লাস নেয়। বিনিময়ে তিনি কোনো টাকা নেন না। হাচিনসনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর কমিতা ত্রিপুরা ও দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্ক বড়ুয়া জানায়, মুকুল স্যারের কাছে আর্ট শিখতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের মত অনেকে স্যারের কাছে আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রামরতন কার্বারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উত্তম ত্রিপুরা বলেন, ছোটবেলা থেকে মুকুলের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল। আজ কয়েক বছর ধরে বিনা পয়সায় গ্রামের ছেলেমেয়েদের ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে প্রতিবন্ধী মুকুলকে এখন অনেকে চেনেন।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা (স্বর্ণা) বলেন, সমাজে অনেকেই মনে করে, প্রতিবন্ধী মানে সমাজের বোঝা, আসলেই বিষয়টি এরকম নয়। মুকুল কান্তি ত্রিপুরা অধাবধি যেসকল সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলো দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এমনে এমনে দেয়নি। তিনি তার নিজ যোগ্যতায় তা অর্জন করেছেন। এছাড়া আমিও একদিন সরেজমিন গিয়ে দেখবো। ইতিমধ্য আগের ইউএনও মোহাম্মদ উল্ল্যাহ, প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে একটি ঘর করে দিয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম বলেন, মুকুল ত্রিপুরা দীঘিনালার মায়াফা পাড়ার ছেলে। আমি প্রথম আলোর সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়ার মাধ্যমে জানতে পারি যে, সেখানে একজন প্রতিবন্ধী ও ভালো চিত্রশিল্পী আছে। সে বিনামূল্যে এলাকার শিক্ষার্থীদের আর্ট শেখান। পরে খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মহোদয়ের নির্দেশে তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্ট স্কুল তৈরি করে দিয়েছি। এছাড়াও অপরাপর ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলোকে সার্বিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।