[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
বান্দরবানের থানচিতে ১৩মাস পর পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহারজিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে কাপ্তাইয়ে দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণবান্দরবানে খুলে দেয়া হয়েছে লামা উপজেলার সকল রিসোর্টসীমান্তে পুশইন ও চোরাচালান ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বাঘাইহাট বিজিবিলংগদু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবির টহল জোরদার: লে. কর্ণেল নাহিদ হাসানরাঙ্গামাটিতে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক আটকপুশইন ও চামড়া পাচার রোধে রামগড় ৪৩ বিজিবির নিরাপত্তা জোরদাররাজস্থলীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালনচামড়া পাচার ও সীমান্ত দিয়ে পুশইন ঠেকাতে বিজিবি টহল বাড়িয়েছেমাটিরাঙ্গা সেনা জোন কর্তৃক ঈদ উপহার ও মানবিক সহায়তা প্রদান
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

বান্দরবানে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত

৪২

॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥

নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বান্দরবান শুরু হয়েছে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব মাহা ওয়াগ্যেয়ে পোয়েঃ (প্রবারণা পূর্ণিমা)। দিনটির উপলক্ষে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ধর্ম দেশনা মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়।

বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৭ ঘটিকায় বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ, মাধ্যমে উৎসব শুরু হয়। ধর্মসভায় বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ রাজা ইন্জিনিয়ার উ চ প্রু, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং, রাজপরিবারের সদস্যবর্গ ও দায়ক-দায়িকারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবারণা পুর্ণিমা পালন উপলক্ষে সকাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন বিহারে বিহারে ভিক্ষুদের ধর্মীয় দেশনা বুদ্ধ পূজা,পঞ্চশীল,অষ্টশীল ও বিহারে ফুল,ছোয়াইং ও অর্থ দান ধর্মীয় দেশনা অংশগ্রহনে মধ্য দিয়ে বিহারে বিহারে চলছে ধর্মীয় দেশনা ও জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনা ও করোনা মুক্তির কামনায় করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা।
তাছাড়া সন্ধ্যায় নর-নারী, দায়-দায়িকা, উপ-উপাসীকাবৃন্দ পুনরায় বিহারের সমবেত হয়ে পূণ্য লাভের আশা বিহারে নগদ অর্থ দান, মোমবাতি, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, অষ্টপরিষ্কার দান, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করবেন। ধর্মদেশনা শেষে ভগবান বুদ্ধের (চুলা মনি জাদি) উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হবে আকাশে নানা রংবেরং এর ফানুস বাতি।

বান্দরবানে এক স্থানীয় সাংবাদিক কিকিউ মারমা জানান, প্রত্যেক বছরই এই দিনটির জন্য অধির আগ্রহে চেয়ে থাকি। গেল বছর ঘরের গন্ডির ভিতরে ধর্মীয় পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারের পুরোদমে সকলকেই নিয়ে একযোগে উৎসবটি পালন করতে যাচ্ছি। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো মারমাদের ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে- এর মঙ্গল রথযাত্রা বিসর্জনের সাথে বিশ্ব থেকে অতিমারী করোনা দূর হোক আর দেশের শান্তি বয়ে আনুক এই কামনা করি।

এদিকে মারমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তাদের ভাষা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে নামেই পরিচিত অর্থাৎ যার বাংলা প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবটি দুইদিন ব্যাপী পালন করবে তারা।

মারমা সম্প্রদায়ে আয়োজকরা জানান, বান্দরবানে মারমাদের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে মঙ্গল রথ শোভাযাত্রা। বুধবার সন্ধ্যায় বিশাল আদলে রাজহংসী তৈরি রথ তার ওপর একটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে যাওয়া হবে। পরেদিন রথটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রদক্ষিণ করে মধ্যরাত্রে সাঙ্গু নদীতে রথটি বিসর্জন দেয়া হবে।

তাছাড়া বুধবার রাত থেকেই শুরু করে শহরের বিভিন্ন পাহাড়ী পল্লীগুলিতে অলি-গলিতে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরির উৎসব চলবে সারারাত। ওইসময় পাহাড়ী তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা তৈরিতে মেতে ওঠেন। ভোরে নর-নারীরা সমবেত হয়ে ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে বিহারে ছোয়েং (পিঠা আহার) দান করবেন। কিছু পিঠা, পায়েশ আবার প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতেও বিতরণ করা হয়।

এই প্রবারণা পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ সাধকরা টানা তিন মাস বর্ষাবাস সমাপ্ত করে ধর্ম প্রচারে বেরিয়ে পড়েন। প্রবারণা পূর্ণিমার দিন থেকে বৌদ্ধদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। তাই বৌদ্ধদের জন্য এই পূর্ণিমাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে আজ ও।
বিহারে বিহারে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী ও পুরুষেরা উপস্থিত হয়ে সুখ : শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হচ্ছে। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধুপকাঠি প্রজ্জলন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) প্রদান করে দিনটি উদযাপন করছে।

প্রবারণা পুর্ণিমা পালন উপলক্ষে সন্ধ্যায় পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠ থেকে মহারথ টেনে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নিয়ে যাওয়া হবে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে ও উজানীপাড়া মহা বৌদ্ধ বিহারে, আর নানা ধরণের ফানুস বাতি উড়ানোর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সাংগু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই প্রবারণা উৎসবের।