কুমিল্লায় পূজামন্ডপে কোরআন অবমাননার অভিযোগ
বান্দরবানের লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দির ভাংচুর, ওসি সহ আহত অর্ধশতাধিক
॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥
কুমিল্লায় পূজামন্ডপে কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লামা উপজেলার সবচেয়ে বড় ও প্রধান কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় হামলাকারীদের ছোঁড়া ইটপাটকেলে সনাতন ধর্মালম্বীদের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। আহত ওসিকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টানা ৫ ঘন্টা এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে।
তিনি আরো বলেন, গুরুতর আহতদের চমেক হাসপাতাল ও পার্শ্ববর্তী চকরিয়া খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে। হামলাকারীরা মন্দিরের অনেক মালামাল, লোহার গেইট, সীমানা দেয়াল, প্যান্ডেল, ডেকোরেশনের গেইট সহ ৩০টির অধিক হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজনের দোকানপাট ও ৫টির অধিক বসতবাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। প্রতিমা রক্ষা করতে গিয়ে সনাতন ধর্মের অনেক যুবক আহত হয়েছে। তারা মন্দির ভাঙ্গে নাই আমাদের কলিজা ভেঙ্গেছে। হামলাকারীরা সনাতন ধর্মীয় লোকজনের বসতবাড়ি ও দোকানপাট ভাংচুর করেছে।
এদিকে হামলাকারীদের ছোঁড়া ইট পাটকেলে লামা থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাংবাদিক সহ ৯ জন আহত হয়েছে। ওসি লামাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। অনেকে গুরুতর আঘাত হয়েছেন। আহতদের লামা সরকারি হাসপাতালে ও আলিঙ্গন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অর্ধশত ফাঁকা গুলি (টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট) নিক্ষেপ করা হয়।
জানা যায়, কুমিল্লা পূজামন্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার প্রতিবাদে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় লামা বাজারের উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে প্রতিবাদ সভা করেছে উপজেলার সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা। লামা কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আজিজুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন লামা পৌরসভার মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম, লামা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ ইব্রাহিম সহ প্রমূখ।
প্রতিবাদ সভার পরপরই উপস্থিত জনতাকে চলে যেতে বললে উচ্ছুক জনতা কারো কথা না শুনে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে লামা বাজার প্রদক্ষিণ করে। শেষে মাছ বাজারের মোড়ে গিয়ে মন্দিরের পূর্ব দিক থেকে ভাংচুর শুরু করে। সহস্রাধিক মানুষ ৫ ঘন্টা ব্যাপী লামা বাজার কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, তার আশপাশে ভাংচুর ও তান্ডব চালায়।
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, লামার ইতিহাসে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনো ঘটেনি। ঘটনার পরপই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, লামা পৌরসভা মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার নিরলস চেষ্টা করেন। দুপুরে আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার মঞ্জুরুল ইসলাম উপস্থিত হয়। তারপরে মেজর রুবেল এর নেতৃত্বে বিজিবির ২ প্লাটুন সদস্য লামা বাজারে উপস্থিত হয়।
এদিকে বিকাল ৪টায় পরিস্থিতি পরিদর্শনে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আকতার লামায় আসেন। তারা বিকেল ৫টায় লামা উপজেলা পরিষদ হলরুমে লামা সর্বস্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, আলেম সমাজ ও সনাতন ধর্মের প্রতিনিধিদের সাথে জরুরী বৈঠকে বরেন। বৈঠক শেষে তারা লামা হরি মন্দির পরিদর্শন করেন। জেলা প্রশাসক সনাতন ধর্মের লোকজনকে এমন ঘটনা আর হবেনা বলে আশ্বস্ত করেন।