রাঙ্গামাটিতে বিদেশি ফল ‘রামবুটান’
॥ মোঃ আরিফুর রহমান ॥
‘রামবুটান’ একটি বিদেশি ফল। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের কদম ফুলের মতো। অনেকেই প্রথমবার দেখে এ ফলটিকে “দাড়িওয়ালা লিচু” মনে করেন। কাঁচা অবস্থায় দেখতে ফলটি সবুজ আর পাকলে লাল বা গোলাপী রং ধারণ করে। এতে যথেষ্ট পরিমাণ ওষধি গুণ বিদ্যমান। খোসার গায়ে চুল বা কাঁটার মতো অংশ থাকে । উপরের অংশ ফেলে দিলে ভেতরের অংশ দেখতে লিচুর মতো, বেশ সুস্বাদু। রাঙ্গামাটিতেও যাওয়া যাচ্ছে এ বিদেশি ফল ‘রামবুটান।
সরেজমিনে রাঙ্গামাটির বিখ্যাত বাজার বনরূপায় ঘুরে দেখা গেছে, রামবুটান ফল আকারভেদে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায় এবং কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৫শত টাকা থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতা সান্তামনি চাকমা জানান, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন থেকে এ বিদেশি ফল সংগ্রহ করে তিনি বনরূপা বাজারে বিক্রি করছেন।
রাঙ্গামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা তপন কুমার পাল জানান, রামবুটান ফলটি লিচু পরিবারের। আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। ফলটির খোসা হালকা চুলের মতো আবরণে ঢাকা। মালয় ভাষায় ‘রামবুট’ শব্দের অর্থ চুল। তাই অনেকে একে হেয়ারি লিচু, কেউ কেউ ফলের রানিও বলেন। এই ফল চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূল। চারা রোপনের ৪ থেকে ৫ বছর পর গাছে ফলন আসে। চৈত্র মাসে গাছে ফুল হয়ে শ্রাবন মাসে ফল পাঁকতে শুরু করে। একটি গাছে শুরুর দিকে ২০ থেকে ২৫ কেজি ফলন দেয়। পরে তা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ কেজিতে দাড়াঁয়।
তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার রাঙ্গাপানি এবং বন্দুকভাঙ্গা এলাকায় কিছু রামবুটানের চাষ হয়েছে। পাহাড়ে এ বিদেশি ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ শুরু করা হয়নি।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক জানান, কৃষি কর্মকর্তারা রামবুটান চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্ভূত করতে কাজ করছে। কয়েক বছরের মধ্যে পার্বত্যাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে রামবুটান চাষ ব্যাপকতা লাভ করবে।
রামবুটান হল এক ধরনের মাঝারি আকৃতির ফল। বৈজ্ঞানিকভাবে এর নাম নেফেলিয়াম সিয়াম। এটি মূলত মালে ইন্দোনেশিয়ান অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা শরীরের অনাক্রমতা বাড়াতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলিকে বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও রামবুটানের মধ্যে তামা রয়েছে, যা রক্তনালীগুলোকে এবং রক্ত কোষগুলির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে লোহার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে কাজ করে। এছাড়াও নানান ওষুধি গুণাগুণে ভরা এ ফলটি। এটি আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে পরিচিত।