[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
থানচিতে বংয়ক হেডম্যান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধনচন্দ্রঘোনায় ধ্রব সংস্কৃতি পরিষদের বিজয়ীদের মাঝে সনদ বিতরণহুন্ডা আর গুন্ডা ভাড়া করে নির্বাচন ঠান্ডা করার চিন্তা বাদ দেন: অ্যাড. মোখতারমাইনীমুখ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি- হাসেম, সম্পাদক- আলাউদ্দিনকাপ্তাই-এ ২২৭জন কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণ১৭২ কোটি টাকায় লামায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের কাজ শুরুরাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে দুস্থদের মাঝে ভিজিডি চাল বিতরণলক্ষ্মীছড়িতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনজাতীয়তাবাদী দল বিএনপি একটি গণমানুষের দল: আবু তালেবধানের শীর্ষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

“রং বিলাস” আখ চাষে লাভবান চাষিরা

৪৩

॥ আকাশ মারমা মংসিং বান্দরবান ॥

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তামাক চাষ ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে রং বিলাস আখ চাষে ঝুকছেন চাষিরা। বিভিন্ন চাষে পাশাপাশি আখের চাষের দিক দিয়েও থেমে নেই পাহাড়ে। পার্বত্যঞ্চলে অন্যান্য ফসলের মতো আখ চাষ ছিল স্বল্প পরিসরে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে বর্তমানে পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও প্রচুর জমিতে ও পাহাড়ের পাদদেশে চাষ হচ্ছে আখের।

পার্বত্য এলাকায় আখের চাষ ও বাজার ক্রমেই বাড়ছে। ফলে অনেকটা নীরবেই এ অঞ্চলে আখ চাষে বিপ্লব শুরু হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ের কিংবা সমতলে আখ চাষে সফলতা পেয়েছে চাষিরা। সে সফলতায় সচল হয়েছে অর্থনৈতিক চাকা। এতে সম্পৃক্ত হচ্ছে তামাক ও জুম চাষিরা। তাই আখ চাষে আগ্রহ বেড়ে নিজ উদ্যোগে আখ বাগান করেছে অনেক জুম ও তামাক চাষিরা। এইবার চলতি মৌসুমে পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় আখ উৎপাদন হয়েছে ভালো। উৎপাদিত আখের আশানুরূপ দাম পেয়েও খুশি চাষিরা। তাদের আর্থিক উন্নতি ছাড়াও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে প্রকৃতি-পরিবেশ।

বাংলাদেশ ইক্ষু সুগারক্রপ ইনষ্টিটিউট তথ্য মতে, গেল মৌসুমে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আখের চাষ হয়েছে ৪৫৫ হেক্টর, ফলন হয়েছে ১৬০ হতে ১৮০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আখের চাষ হয়েছে ৪৮০ হেক্টর । তবে চলতি বছরে ফলনে এখনো নির্ধারিত করা হয়নি বলে জানান ইক্ষু গবেষক কর্মকর্তা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রোয়াংছড়ি, জামছড়ি, ক্রেক্ষ্যং পাড়া, মুসলিম পাড়া, মিনঝিরি, সুয়ালক সহ বিভিন্ন স্থানে চাষিরা সমতল জুড়ে রঙ বিলাশ আখ চাষ করেছে। যা আখ আকারে ১২ থেকে ১৫ ফুট লম্বা, মোটা ও সুমিষ্ট। আখকে উপযুক্ত করে তুলতে আখের চারিপাশে বাঁশ দিয়ে রয়েছে বাধানো । যাতে আখ গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত বাকা ও ঢলে না পড়ে। একবছর পুরোদমে পরিচর্যা শেষে বিক্রি জন্য উপযুক্ত সময় আসলে ক্রেতারা ঘুরছেন আখ চাষিদের বাগান জুড়ে।

জানা যায়, অক্টোবর মাস হতে আখের বিজ রোপন করা কাজ শুরু হয়। আবাহাওয়া মৌসুম প্রতিকুলে থাকলে আখের বীজ রোপন শুরুতেই সার, কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। অতপর আখের ক্ষমতা ও পচন হতে রক্ষার্থে জমির মাঝখানে নালা গর্ত করে পানি চলাচলে রাস্তা প্রস্তর করে দেওয়া হয়। যাতে আখের চারা রোপন হতে শুরু থেকে বৃষ্টি পানি তলিয়ে না যায়। এমনকি বিজ রোপন শুরু থেকে পুরো একবছর পরিচর্যা পরিই যাতে বিক্রি উপযোগী হয়।

জামছড়ি এক চাষি চিহ্লামং মারমা (৫৪) জানান, ৫ বছর ধরে রঙ বিলাস আখের চাষ করে আসছি। চাষ করার আগে ইক্ষু সুগারক্রপ হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে আখের চাষ শুরু করেছি। তবে চাষ শুরুতেই সার,কিটনাশক ও চারা বিতরণ করেছে ইক্ষু প্রতিষ্ঠান। এখন আখ বিক্রি করে লাভের আশা করা যাচ্ছে।

একই এলাকায় নতুন চাষি মংসিনু মারমা (৪৫) জানান, আমি এই বছরে প্রশিক্ষন নিয়ে ৮০ শতক জায়গা জুড়ে রঙ বিলাস আখ চাষ শুরু করেছি। সঠিক পরিচর্যা মাধ্যমে আমার ফলন ভালো হয়েছে। তবে ইক্ষু সুগারক্রপ হতে দুইজন কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কাজ করে যাচ্ছে।

মুসলিম পাড়া আখ চাষি লিয়াকত জানান, ১০ বছর ধরে রং বিলাস আখ চাষ করে আসছি। আগের চেয়ে এখন কম করে ৪০ শতক কাছাকাছি রং বিলাস আখের রোপন করেছি। এর আগে বেশি করে রং বিলাস আখের চাষ করতাম। কাজের সামাল দিতে না পারায় এই বছরে কমে করেছি।

বালাঘাটা বাজারে আখ খুচরা বিক্রেতা মোঃ সাহেদ(২০) জানান, আমি এই বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে আখ বিক্রি করে আসছি। এই সময় এসে আখের মিষ্টি সুস্বাধু। তবে অক্টোবর দিকে গেলে আরো মিষ্টি হয়। বাজারের নিয়মনুযায়ী এক একটি আখের দাম ৩০ হতে ৪০ টাকা বিক্রি করছি। প্রতি আখ থেকে কমপক্ষে ১০-১৫ টাকা লাভ থাকে।

বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনষ্টিটিউটে কৃষিবিদ উর্ধ্বতম বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ক্যচান মারমা বলেন,সুগারক্রপ ইনষ্টিটিউট পক্ষ হতে ১৬০ জন চাষীদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষন শেষে চাষিদের মাঝে ১৫০০ বিজ বিতরণ করা হয়। সেই সাথে চাষিদেরকে কাজ শুরুতেই বীজ,সার,কিটনাশক একসাথে দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃষকদের প্রণোদনা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। তবে কাজ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত চাষীদের কোন ভাবে ক্ষতি না হয় সেই জন্য মাঠে দুইজন টেকনিশিয়ানকে পর্যবেক্ষন করা জন্য রাখা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, কৃষকদের আখ বিক্রির ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকারিভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ।তবে গেল বছর চেয়ে এই বছরে চাষীদের আখ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। পাহাড়ে বর্তমানে আখ চাষের যে গতি তাতে এ অঞ্চলের কৃষি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক পরিবর্তনে এটিই বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।