ভোগান্তির পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি প্রধান বাজার সড়কের বেহাল দশা
॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আমতল সড়ক থেকে মানিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ও বাটনাতলী যাওয়ার মূল সড়ক পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত রাস্তার বিভিন্ন অংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানিকছড়ি বাজারের প্রধান এ সড়কের ৮ থেকে ১২টি স্পটে খানাখন্দে ভরা, কোথাও হাঁটু পানি জমা। প্রধান এ সড়কটির বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে।
সরেজমিনে দেকা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই পুরো সড়কজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে হাটু পানি। প্রতিদিনই সড়ক দিয়ে সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে ভ্যান, অটোরিকশাসহ আটকে পড়ছে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ডভ্যান। জনদুর্ভোগের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু হতাহত ও যানবাহন আটকে যাওয়ার ছবি ও লেখার পর বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নল আবেদীন। দুর্ভোগের চিত্র দেখে তাৎক্ষনাৎ ইট ও বালু দিয়ে বাজারের মা ভবণের সামনের অংশটি গত রবিবার দুপরের মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করেন। তবে সেটি আবারও পানি জমে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। খুব সতর্ক অবস্থানেই চলাচল করতে হচ্ছে পথচারী ও যানবাহনের।
দেখা গেছে, আমতল সড়কের প্রবেশ মুখেই কৃষি ব্যাংকের সামনের কালভার্টটি ভেঙ্গে ঝুকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করছে পথচারী ও যানবাহন। ছোট-বড় খানাখন্দ তো রয়েছেই। একটু সামনে মা ভবণের সামনের অংশ তো যেন মৃত্যু কূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আটকা পড়ছে ছোট-বড় যানবাহন। তাছাড়া বাজার সড়কের এমন কোনো জায়গা নেই যেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায়। তার উপর রাস্তায় পানি জমে আরেক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ভয়াবহ সড়কে মন্থর গতিতে সকল যানবাহল চলাচল করছে। সিএনজি, অটো এবং যারা চলাচল করছে তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। গত কয়েকদিন আগে একটি অটোরিকশা পানির গর্তে উলটে যায়। গাড়িটিতে থাকা একটি শিশুবাচ্চা ও মহিলাসহ অন্য যাত্রীরা আহত হয় এবং কাঁদা দিয়ে সারা শরীর মেখে যায়। এভাবে প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও যানবাহন।
বাজার ব্যবসায়ী মো. ইমরান হাবিব জানান, এই রাস্তাটি গতবছর সংস্কার করা হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে পানি জমে রাস্তার এই বেহাল দশা। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবী জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী মোঃ খোরশেদ আলম জানান, দোকানের সামনের অংশেই সার্বক্ষণিক পানি জমে থাকে। তাই ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। প্রায় সময় রাস্তায় জমে থাকা পানি পার্শবর্তি দোকান গুলোতে প্রবেশ করছে। হাঁটাচলাও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভ্যান গাড়ি চালক আবুল হাশেম জানান, তিন চাকার গাড়ি চালাই আমরা। সামান্য এদিক ওদিক হলেই কাথ। খুব সর্তক থাকতে হয় ভ্যান চালানোর সময়। ৫ মিনিটের রাস্তা ৩০ ঘন্টারও বেশি লাগে।
বাজারের ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা জমির আলী জানান, আমরা সব সময় বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসিনা। মাঝে মধ্যে আসি। তবে আগে বাজারের একাধিক স্থানে বসার জায়গা থাকেলও বর্তমানে জমা পানি আর কাদায় স্বাচ্ছন্নমত বসার সুযোগ নেই। কাদা আর ময়লা পানিতে ভরা সব জায়গা। আরেক সবজি বিক্রেতা আল আমিন জানান, বাজারে রাস্তার পাশেই সবজি বিক্রি করে পেট চালাই। কিন্তু বর্তমানে রাস্তার উপর পানি জমে কাদার কারণে বসার জায়গা পর্যন্ত নেই। কোনো মতে বসে টুকটাক ব্যবসা করছি।
লাকি ফার্মেসীর প্রোপাইটার মো. কাউছার জানান, প্রতিনিয়ত দোকানের সামনে দাড়িয়ে ক্রেতার ঔষধ কিনে। বর্তমানে রাস্তার যে অবস্থা তাতে ক্রেতা বেশি হলে দাড়ানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক শনিবার হাটে ও চলাচলই করা কঠিণ। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মানিকছড়ি বাজার সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত লোকজন আমাদের মন্দ বলছে। সড়কটি এলজিইডির তত্ত্বাবধানে থাকায় একাধিকরার তাদের এ ভোগান্তির ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে। শুনেছি এ সড়কটির কাজ শুরু হবে তবে কবে নাগাদ শুরু হবে তার কোনো খবর নেই।
মানিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল খালেক জানান, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির বেহাল দশার কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে সড়কটি মেরামতের জন্য এক কোটি টাকার একটি ইস্টিমেট করে জেলা অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে জানা গেছে। আশা করছি আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু হবে।