[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

লজ্জিত

১২৩

॥ মিলটন বড়ুয়া ॥

লজ্জা, লজ্জার, লজ্জিত, বা আরো… এই শব্দের আভিধানিক অর্থ হয়তো কাউকে বোঝাতে আমার কষ্ট হবে না। কিন্তু এই ল+ ি+জ্+জ+ত শব্দের কারণ, বিশ্লেষণ বা এ বিষয়ে আরো অনেক অনেক কিছু আছে, থাকতে পারে। নিজ নিজ কাজে বা দায়িত্ব পালনে, কল্যাণ কাজের দায়িত্ব নিয়েও যদি হীন স্বার্থ চরিতার্থ করে সমাজ বা প্রশাসনে অন্যদের লজ্জায় লজ্জিত করে বসে। ধরুন, রাস্তা ঘাটে যখন কোন উম্মাদ তার মতই করে হাঁটে অনেকে তার দিকে তাকায় না, আবার অনেকে তাকিয়ে লজ্জিত বোধ করে, আবার কেউ ঠাট্টাও করে। কিন্তু যদি কারো লজ্জাবোধই না থাকে তাকে এই লজ্জাবোধ এর বিপরীতে নির্লজ্জই নিশ্চয় বলে। যখন কারো এই নির্লজ্জ শব্দটি গায়ে লেগে যায়, আবার তার থেকে ছড়ায়ও তখন আরো লজ্জায় নিমজ্জিত এই হওয়া ছাড়া তো কিছু থাকে না। কিন্তু এই নির্লজ্জদের কারনে লজ্জায়, লজ্জিতদের নিমজ্জিত থেকে বাঁচাতে কারো-না কারো-তো সহযোগীতাই প্রয়োজন, তাই না।

স্কুল ও কলেজ জীবনে বই পড়া, গল্প, উপন্যাস, কবিতা পড়াতে বিশেষ মনোযোগী ছিলাম। বাবার প্রেস এর ব্যবসা দেখাশুনার পাশাপাশি ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে হাতেখড়িতে সাংবাদিকতায় প্রবেশ। তখনো আমার কলেজ জীবন শেষ হয়নি। বর্তমান রাঙ্গামাটি রিপোটার্স ইউনিটি এর সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমার হাত ধরেই অনেকের মধ্যে আমিও রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনকল্যাণের মহা এই পেশায় নিজেকে সপে দিলাম। ব্যবসা সাথে পড়াশুনা এবং সাংবাদিকতা নিয়েই বাণিজ্যে ডিগ্রী অর্জন করলাম। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ত্যাগ আর প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে এ কাজে সফলতা অর্জনে আজ অবদি দায়িত্ব পালন করেই চলেছি। স্বপ্ন ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করার। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় তাও হয়েছে। সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল এর সময়ে ২০১৪ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি ‘সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময়’ এর নামে জেলা প্রশাসনে আবেদন করেছিলাম। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌহিদ, তাঁর বাড়ি সম্ববত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি আমাকে কতোয়ালী থানায় ডেকে নিয়ে চা নাস্তা করালেন, বললেন তদন্ত করতে গিয়ে আপনার বিষয়ে সুনামই পেয়েছি, ‘দাদা’ আপনার জন্য আমি গর্বিত। ছোট ভাই সাংবাদিক মঊন উদ্দিন বাপ্পিও যথেষ্ট শ্রম দিয়েছিল। তার পর আরো দীর্ঘ সময়ের গোয়েন্দা তদন্ত, প্রশাসনিক নানান কাজের পরে সরকারিভাবে ‘সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময়’ পত্রিকা প্রকাশের অনুমোদন পেয়ে বিগত ২০১৭ সালের ২৩ জুন ছোট ভাই সাংবাদিক নুরল আমীন মানিক কে সাথে নিয়েই প্রথম যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৫-২০২১ইং পর্যন্ত আমার স্বেচ্ছা এ কর্ম পেশার বয়স ২৬ বছর চলছে। তার মধ্যে অনেক কিছু দেখার-শেখার, জানার হয়েছে।

সাংবাদিকতা মহৎ পেশা, শুধু তাই নয় এই পেশাটিতে দেশ, রাষ্ট্র, সামাজ তথা প্রশাসন প্রত্যেক খাতেই সুচিন্তিত প্রভাব খাটে। তাই যে দেশের গণমাধ্যম যত শক্তিশালী সেদেশের রাষ্ট্র, সামাজ তথা প্রশাসন তত বেশী উন্নত এবং বিচক্ষণও বটে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের ক্ষুরধারের লেখা এদেশের বিজ্ঞ বিজ্ঞ সাংবাদিকরাই দর্পন হিসেবে চিহ্নিত। সুন্দর দেশ, রাষ্ট্র, প্রশাসন গঠনে গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকদের ভুমিকাকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগও নেই। কিন্তু এ সাংবাদিকতা পেশাটিকে কেউ কেউ যখন হলুদ সাংবাদিকতা, ব্যবসা, লুটপাট, অ-গণতান্ত্রিক আচরণ, দুবৃত্তায়নের রূপ দেয়া হয় তখন দেশের প্রকৃত সাংবাদিক সমাজকে লজ্জায় লজ্জিত করে, এমন কি লজ্জায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা পেশাকে নিয়ে বিদ্বেষ মনোভাবাপন্ন চরিত্র, প্রতিহিংসাপরায়নতা, হলুদ সাংবাদিকতা, অন্যের দালালি করা, তথ্যের ব্যবসায়ীক রূপ, কোন কোন বিষয়কে রংচটা দিয়ে সেনসেটিভ হিসেবে তুলে ধরা আর তাই নিয়ে লুটেরা সুবিধাবাদী সাংবাদিক নামের তথ্যসন্ত্রাসীদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানো। কারো কারো বেলায় ঠিক এভাবেই তাদের অপসাংবাদিকতা করেই যাচ্ছে। সাংবাদিকতা নিয়ে এদের নেই কোন ভালো চিন্তা, এদের মতলব একটাই ঘাটে ঘাটে টেক্কা দিয়ে অর্থ কামাই।

১৯৭৮ সালে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব গঠিত হয়। শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত এ প্রেস ক্লাবে শুরুর অনেকেই এখনো রয়েছেন। ১৯৭৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এ ক্লাব এর বয়স এখন ৪৩ বছর ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। বিশেষ করে ১৯৯৪’র পর সাংবাদিকতা পেশায় নতুন দের যে ভাবে আগমন ঘটেছে তা অভাবনীয়। কিন্তু এ অভাবনীয় সাংবাদিকদের জায়গা হলো না প্রেস ক্লাবে। এভাবে চলতে চলতে কেন জানি পেশাগত দায়িত্বের, সু-চিন্তার, সহযোগীতার, সহমর্মিতার অভাবে প্রেস ক্লাব এর বিপরীতে সাংবাদিক সংস্থা, রিপোটার্স ইউনিটি, সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ফোরাম, জার্নালিষ্ট নেট ওয়ার্ক, এসোসিয়েশন ইত্যাদি সংগঠন হয়ে গেছে। প্রেস ক্লাবে সদস্যপদ না পাওয়ায় জেলায় সংগঠনে সংগঠনে লংকাকান্ড হলেও এদের কাছেই দেশের অধিকাংশ লিডিং পত্রিকা টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতিনিধির নেতৃত্ব। দুই যুগের অধিক সময় পর এ প্রেস ক্লাবে সদস্য নিয়োগ দিলেও অনেক সিনিয়র সাংবাদিকদের সদস্য পদ দেয়নি। এ ক্লাবের কিছু সাংবাদিকরাই ভাবছে যে সদস্যপদ দিলে তাদের নানা কিছু সংকুচিত হয়ে যাবে। আসলে এসব চিন্তা হলো ঘুনেধরা বাঁশ কাঠের মতো। রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে ঘুনেধরা চিন্তার নেতৃত্বই নষ্টের বীচ বপন করেছিলেন। ক্লাবের বর্তমান সভাপতি রুবেল, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সহ আরো দু একজন যখন সদস্য করতে আগ্রহী তখন এখানে ঘুনেধরাদের না হয়ে দাঁড়ালো। যার কারনে সম্প্রতি সুশীল প্রসাদ চাকমাকে সভাপতি ও নন্দন দেব নাথকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৮ সদস্য-সদস্যা নিয়ে বিকল্প রাঙামাটি প্রেস ক্লাব গঠিত হয়। লক্ষ্য ছিল একটাই পুরনো প্রেস ক্লাব তাদেরকে সদস্য করতে হবে। কিন্তু সেখানেও সুনির্দিষ্ট নেতৃত্বের সংকট থাকায় সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। তাই মতলববাজদের নানা মতলবের সুযোগ সন্ধানীরা নতুনকে ব্যবহার করে পুরাতনে জায়গা করে নিয়ে মুচকি হাসছে, এই মুচকি হাসাদের সাথে রয়েছে অনেক কাঁদা ছোড়াছুড়ি।

সাংবাদিক হলে যে অর্থ সম্পদের মালিক হবে না এটাওতো মানতে পারি না। কেননা সাংবাদিকরা নিজে সব ত্যাগ করে, উপোস থেকে দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণ-উন্নয়নে খালি লিখেই যাবে সেটাও হতে পারে না। কিন্তু সাংবাদিকতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি করবে, কেউ চাকুরী পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লুফে নেবে, কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে দালালি করে দামি দামি গাড়ি হাঁকা। নিজের জ্ঞ্যাতিগুষ্টিকেও চাকুরী পাইয়ে দেয়া। নেতা-নেত্রী, সরকারি পদস্ত কর্মকর্তাদের কানের কাছে গিয়ে ফিস্ ফিস্ করে কথা বলে নিজের সখ্যতাকে প্রকাশ করে হীন পুঁজি করছে। অপসাংবাদিকতার সতীর্থরাই চাঁদাবাজি করতে গিয়ে একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে অভিযোগ থানাও গড়াবে, সংবাদও হবে। তাই সাংবাদিকতাকে কপিরাইট, অপসাংবাদিকতা, দুবৃত্তায়নে রূপ দেয়া নিয়ে এ পেশায় কালি লেপন করেই চলেছে। অপসাংবাদিকদের সাথে রেখে কোন নেতৃত্ব ও সাংবাদিকতার পেশার মান উজ্জল হবে না বরং ভালোরাই ঘৃনার পাত্র হবে। আমিও যে একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা তাইও নয় তবে কেউ আমাকে স্বেচ্ছায় সহযোগীতা দিলে বা চেয়ে নিলে তাতো হাত পেতেই নিতে হবে। কিন্তু ঘুনেধরা, লুটেরা, অপসাংবাদিকদের সাংবাদিকতা নিয়ে আমিও লজ্জিত। যাদের কারনে এই লজ্জার সৃষ্টি তাদের যদি লজ্জাবোধ নাই থাকে এর বিপরীতে তাকে নির্লজ্জই নিশ্চয় বলে, এই নির্লজ্জ শব্দটি যদি গায়ে লেগে যায়, আবার তার থেকে ছড়ায়ও তখন আরো লজ্জায় নিমজ্জিত, এই হওয়া ছাড়া তো কিছু থাকে না। কিন্তু এই নির্লজ্জদের কারনে লজ্জায়, লজ্জিতদের নিমজ্জিত থেকে বাঁচাতে কারো-না কারো-তো সহযোগীতাই প্রয়োজন, তাই না। সাংবাদিকতা পেশাকেতো বাঁচাতে হবে, কিন্ত সেটি কখন, কারাই বা বাঁচাবে।

লেখক- মিলটন বড়ুয়া, সম্পাদক ও প্রকাশক, সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময়