বান্দরবানের থানচিতে বৃষ্টি কমলেও মানুষ পানিবন্দি
॥ চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি ॥
বান্দরবানে থানচিতে টানা ভারী বৃষ্টির থেমে গেলেও সাঙ্গু নদীসহ আশেপাশে ঝিড়ি, খাল-বিলের পানি ধীরে ধীরে কমে উপজেলা সদরে কিছু এলাকারসহ বলিপাড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকারগুলোতে হালকা পানি ও কাঁদামাটি জমেছে। বান্দরবান থানচি সড়কে বইক্ষ্যং ঝিড়ি হতে বর্ষায় পানি কমে বাগান পাড়াসহ আশেপাশে বসবাসরতদের বাড়ি-ঘর কোথাও কোথাও কাঁদামাটি ও হাটুঁর সমান পানিতে গ্রামের শতাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে উপজেলা বলিপাড়া ইউনিয়নের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পে আওতায় বাগান পাড়াকেন্দ্রটি ভারী বর্ষণে পাহাড় থেকে ঢেলে পানি প্লাবিত কবলিত পড়ে ডুবে গেছে। এখনো বন্ধ আছে থানচি উপজেলা সদরের সাথে তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নের নৌ যোগাযোগ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে গুটি-গুটি বৃষ্টির হওয়ায় থানচি উপজেলা নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত পানি ধীরে ধীরে কমে আসছে। কিন্তু কোমরে সমান পানি কমলেও হাটুঁর সমান পানি ও কাঁদামাটি থাকার ঘর-বাড়িতে উঠতে উপযুক্ত হচ্ছে না। কাঁদামাটি শুকাতে সাপ্তাহিক সময় লাগতে পারে। উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বাগান পাড়া, হিন্দু পাড়াসহ পার্শ্ববতী এলাকার কোমর সমান পানি কমলেও হাটুঁর সমান পানি ও কাঁদামাটি থাকায় শতাধিক মানুষ পানিবন্দিতে পরিবারের খাওয়ার পানি (বিশুদ্ধ পানি)সহ ব্যবহারে পানি অভাব দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনে সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নদী সাঙ্গুসহ কয়েকটি ঝিড়ি, খাল-বিলের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কোথাও কোথাও প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সকাল থেকে গুটি-গুটি বৃষ্টির পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে স্থানে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রের অবস্থান করতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, গত দিবাত্রী এই অতি বৃষ্টির অব্যাহত থাকায় উপজেলা বিভিন্ন এলাকার বন্যার আশঙ্কায় মানুষ বাসা-বাড়ির মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছিলাম। উপজেলা সদরে ১নং ওয়ার্ডে ক্যৌউক্ষ্যং ঝিড়ি ও কানাইক্ষ্যং ঝিড়িতে বর্ষায় পানি ভরপুর হওয়ায় কালভার্ট সেতুটিতে পানি উঠে সদর বাজার সাথে জরুরী সেবাসহ যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা হওয়ার পথে আপ্রুমং পাড়া, মেকহা পাড়া, মুইখয় পাড়াসহ এলাকার লোকজন রয়েছিল। এখনো হাটুঁর সমান পানি থাকার যোগাযোগ স্থাপনে সড়কে অনেকে যাতায়তের জন্য নৌকা ও বাঁশের ভেলা ব্যবহার করছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে আপ্রুমং পাড়া বাসিন্দা বিধবা চিংওয়াং মারমা (৬৫) বলেন, এবছরে পাড়ার নিকটস্থল কানাইক্ষ্যং ঝিড়ি পাশে জুমের ধান লাগাছিলাম। এই বর্ষা মৌসুমে অতি বৃষ্টির কারণে আমার জুমের ধান প্রায় পানিতে তলিয়ে ডুবে গেছে। এই বয়সে তেমন কাজকর্মও করতে পারি না। সরকারীভাবে কিছু সহায়তা পেলে ভাল হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) আতাউল গনি ওসমানী জানান, এই বৃষ্টির আরো টানা ও ভারী অব্যাহত থাকলে বন্যা ও পাহাড় ধসের আশঙ্কায় রয়েছে। বিপদ সীমায় মুক্ত না হওয়ার পর্যন্ত উপজেলায় নিম্নাঞ্চলে বসবাসরতদের অন্যত্র সরিয়ে নিরাপদ স্থানে কিংবা সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং করছে প্রশাসন। এছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে থানচি উপজেলায় চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা আছে বলে জানান তিনি।