॥ চাইথোয়াই মারমা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে করোনা-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে লগডাউনের মধ্যেও আমন চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সাধারন কৃষকরা। কর্মক্ষেত্রে সাধারণ চাকরিজীবীদের ছুটি থাকলেও কৃষকদের কোনো ছুটি নেই। আমন ধান কাটার পরে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন কৃষি আবাদ। শাক-সবজি, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই আবার শুরু হয়ে যায় বোরো ধান এর পরেই শুরু হয় আমনের আবাদ। তাই এখন আমন লাগানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি প্রত্যন্ত এলাকার অনেক কৃষক।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠের পর মাঠ আমন ধান লাগাতে পুরাদমে ব্যস্ত সময় পার করছে সাধারন কৃষকরা। পুরুষ ও নারী শ্রমিক একই সঙ্গে চারা রোপন করছেন। জুন ও জুলাই মাসে টানা বৃষ্টিতে আমন ধানের চারার তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই এবছর আমন ধানের চারা সংকট হবে না বলে জানান। প্রচন্ড গরম আর বৃষ্টি দুটোকেই উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি আমনের জমি প্রস্তুুতি ও চারা রোপণের কাজ বচলছে। কেউ জমিতে হাল দিচ্ছেন, কেউ বা জমির আইলে চালাচ্ছেন কোদাল আবার কেউ দিচ্ছেন জৈব সার। ধান লাগানোর কারণে অনেক খুশি ও শান্তিতে এ জেলার কৃষকরা। বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার সেচ তেমন প্রয়োজনও হবে না।
খাগড়াছড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এবার খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় কৃষি ২৫হাজার ২শ ৮হেক্টর ও হাইব্রিড ১হাজার ৭শ ৮২হেক্টর সর্বমোট ২৬হাজার ৯শ ৯০হেক্টও জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা বৃষ্টির পানি পেয়ে আমন ধানের চারা লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সদর উপজেলার মংক্যচিং মারমা জানান, তিনি এবার বিআর-৪৯ জাতের ধান লাগাচ্ছেন ৪২ কানি। গতবার এই ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবার আরো ১০কানি জমিতে বেশি আবাদ করছেন। মানিকছড়ি উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের কৃষক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, কিছুদিন ধরে ধানের ন্যায্য দাম পাওয়ায় লাভ হচ্ছে। আগের মতন আর লোকসান গুনতে হচ্ছে না। তাই ধান চাষাবাদ করে বেশ ভাল আছি।
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের তুলাবিল গ্রামের মোঃ আলিমুদ্দিন জানান, পূর্বে ৪থেকে ৫কানি জমিতে বোরো বা আমন ধানের চাষাবাদ করতাম। এবার আমন ১০-১২কানি জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করছি। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, আমন ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া বৃষ্টিপাত না হলে আমন আবাদে খরচও বেশি। তবে এবার ভালো বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমন ধান লাগানোর পর থেকে বেশি সেচ দিতে হবে না। এতে আমনের উৎপাদন খরচ যেমন কমবে তেমনি লাভও হবে। আমন আবাদের পর সরকারিভাবে ভর্তুকি দেওয়া হলে কৃষকরা আরো উপকৃত হবেন।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মর্তুজ আলী জানান, জেলায় এবার আবহাওয়া ভালো রয়েছে। কৃষকেরা পুরো দমে আমন ধানের চারা লাগানোর ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে, প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চাষিদের চারা গুলি লাইন করে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি বোরোর মতই আমনেরও বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।