আশা করছি এলাকায় আর বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকবে না
অবশেষে বিশুদ্ব পানির সংকট নিরসন হলো শিলছড়িবাসীর
॥ কবির হোসেন, কাপ্তাই ॥
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট ছিল কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের শিলছড়ি এলাকার ১৭০টি পরিবার। অবশেষে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যাগে এই সংকট নিরসন করলো উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের শিলছড়ি এলাকার ১৭০পরিবারের প্রায় ৫হাজার পাহাড়ী-বাঙালীর বসবাস। কাপ্তাই উপজেলা সদর হতে মাত্র ২ কিঃ মিঃ পূর্বে শিলছড়ি বাজার, চেয়ারম্যান পাড়া এবং ভেলাপা পাড়া। বাজারের পাশে রয়েছে শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অফিস। কিন্ত স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এই এলাকার বাসিন্দারা কখনো বিশুদ্ধ পানি পাননি। নদীর কিংবা ছড়ার পানি পান করেই মেটাতো চাহিদা । অশুদ্ধ পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হতো এলাকার লোকজন। বিশুদ্ধ পানি আনতে ২ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে রিক্সা, সিএনজি কিংবা ভ্যানে করে বিজিবি ক্যাম্প ও বড়ইছড়ি সদর এলাকা হতে পানি সংগ্রহ করতে হতো।
শিলছড়ি এলাকায় বেশ কিছু রিং ওয়েল আছে তা বছরের পর বছর নষ্ট ভূগর্ভস্থ নিচে নেমে যাওয়ার ফলে তাতে পানি পাওয়া যায়না। শুষ্ক মৌসুমে এলাকায় পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি। শিলছড়ি এলাকার পানি সংকট নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হলে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। এ সংকট নিরসনে এগিয়ে আসেন কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভূ- ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধনের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি, বাগেরহাট এবং ফরিদপুর জেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে কাপ্তাইয়ের শিলছড়িতে ন্যানো ফিল্টার নির্মাণের কাজ শেষ হয়। পাশ্ববর্তী কর্ণফুলি নদী হতে বিশুদ্ধকরনের মাধ্যমে শিলছড়ি বাজার এলাকার ৭০ টি পরিবারকে ন্যানো ফিল্টারের মাধ্যমে এই সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। ন্যানো ফিল্টার টি ২হাজার পানি ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন।
ওয়াগ্গা ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহাবুব আলম জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে শিলছড়ি খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গায় আরও একটি গভীর নলকুপ গত জুনে স্থাপন করা হয়েছে, ফলে শিলছড়ি চেয়ারম্যান বাড়ী এবং ভেলাপা পাড়ার শত শত পরিবার এখন বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে। উপকারভোগী সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মিনু প্রু মারমা, ডাক্তার আবুল কাশেম, মোঃ এমরান এলাকাবাসীর পক্ষ হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান। ৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরনজীত তনচংগ্যা জানান, এই প্রকল্প ২ টি বাস্তবায়নের ফলে এই এলাকার শত শত পরিবার বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে।
কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মন বলেন, সরকারের মিনি ওয়াটার সারফেস ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের আওতায় শিলছড়িতে এই ন্যানো ফিল্টার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকটে নিরসনে একটি নলকুপ স্থাপন করা হয়। ফলে দীর্ঘ দিনের পানির সংকট দূরীভূত হলো।
মঙ্গলবার (২৭জুলাই) প্রকল্প দুইটি পরিদর্শনে করেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান। পাহাড়ি দূর্গম এলাকার অনেক জায়গায় শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সংকট থাকে। এই শিলছড়ি এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে পানির সংকটে ভূগছেন বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মী এবং এলাকার জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে দৃষ্টি গোচর হবার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই এলাকায় ন্যানো ফিল্টার এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসন করি। আশা করছি এলাকায় আর বিশুদ্ধ পানির সংকট থাকবে না।