পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাহার্য্য কামনা
আলীকদমে ভাঙ্গনের কবলে শত বছরের মংচিং হেডম্যান পাড়া
॥ সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, আলীকদম ॥
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ২ নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডের শত বছরের মংচিং হেডম্যান মার্মা পাড়া গ্রামটি চৈক্ষ্যং নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। প্রতি বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে চৈক্ষ্যং নদীর পানির স্রোত তীব্র আকার ধারণ করে। তখন পানির ঢেউয়ে টানা ভাঙ্গছে নদীর কুল। বর্তমানে নদীর ভাঙ্গনে মংচিং হেডম্যান পাড়ার পরিধি সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, আলীকদম উপজেলার জনবসতি গড়ে ওঠার প্রথম দিকে চৈক্ষ্যং নদীর তীরবর্তী এলাকায় অন্ততঃ শত বছর আগে চৈক্ষ্যং খাল মাতামুহুরী নদীর মিলনস্থলে মার্মা ও বাংঙ্গালি সম্প্রদায়গণ বসতভিটা করে বসবাস শুরু করেন। সমসাময়িক ভাবে পাড়ায় জনবসতি গড়ে উঠে। তখনকার সময়ে অন্য উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌ পথ। সে সুবাদে এ পাড়া টি চৈক্ষ্যং নদীর তীরে গড়ে উঠে বলে জানালেন মার্মা পাড়ার পাড়া প্রধান অংসুই প্রু কারবারী। পরে এলাকায় ধীরে ধীরে পাশ্ববর্তী এলাকায় বাঙালি জনবসতিও গড়ে উঠে। চৈক্ষ্যং নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি বৃদ্ধি পায়। একদিকে মাতামুহুরী নদী অন্যদিকে চৈক্ষ্যং নদীর পানির স্রোতে তীব্র ভাঙ্গনে সংকুচিত হচ্ছে মার্মা (গ্রাম) পাড়ার পরিধি। চৈক্ষ্যং নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকের বসতভিটা ও আবাদী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে চলে যান অন্যত্রে। বর্তমানে যারা আছেন তারাও বসতভিটা হারানোর ভয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন অনেক আদিবাসী পরিবার। অব্যাহত ভাঙনের মূখে প্রতি বছর ধ্বংস হচ্ছে নদী তীরবর্তী বসতবাড়ি ও জমি জমা। এখন নদীর পাশে থাকা পরিবার গুলো চরম হুমকিতে রয়েছে। বর্তমানে মার্মা গ্রাম টিতে মোট ৫৫ পরিবারের বসববাস রয়েছে।
মংচিং হেডম্যান পাড়ার পাড়া প্রধান অংসুই প্রু কারবারী জানান, ইতোপূর্বে বান্দরবান জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাড়াবাসীর পক্ষে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন কিছুই জানা যায়নি। যদি নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব না হয় তাহলে এই বর্ষার সময় আরো বেশ কয়েক টি ঘরবাড়ী নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর নিকট আবেদন করেছেন পাড়াটি রক্ষার জন্য একটি ব্লক বাঁধ নির্মাণে।
২ নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ০৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাকের হোসেন মেম্বার বলেন, চৈক্ষ্যং নদীর প্রবল স্রোতে প্রতি বছর ভাঙ্গনের শিকার হয় নদী তীরবর্তী মার্মা গ্রাম টি। পাড়াকে রক্ষা করতে হলে বড় বাজেটের প্রয়োজন। ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য বরাদ্দে সমস্যা সমাধান হবে না বলে জানান। তিনি আরো বলেন, মার্মা পাড়ার নদীর ঘাটে সরকারি ভাবে একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তুু প্রবল বৃষ্টির কারণে নির্মাণ করা সিঁড়িটি ধ্বসে পড়েছে। যদি বাঁধ বা ব্লক নির্মাণ করা না হলে মার্মা গ্রামটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
২ নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, মংচিং হেডম্যান পাড়ার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন। বর্ষায় নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে উপজাতীয় পল্লী মার্মা পাড়াটি। এর আগেও কয়েক টি বসতবাড়ী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কে অনেক বার বলা হলেও তাঁরা সাড়াদেন নি। মার্মা গ্রামটি রক্ষায় ব্লক বাঁধ নির্মাণের জন্য পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।