মজুদ থাকলেও বিক্রয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাঙ্গামাটির গরু ব্যবসায়ীরা
॥ মোঃ আরিফুর রহমান ॥
কোরবানির জন্য গরু-ছাগল বাজারে যথেষ্ট পরিমান উঠলেও এখনো বাজার সেভাবে মিলছে না। প্রাথমিকভাবে বাজারে গরু-ছাগলে দাম বেশী বলে অনেক ক্রেতা জানিয়েছেন। রাঙ্গামাটি শহরের ছোট বড় বেশ কিছু বাজারেই এই অবস্থা এমনকি প্রধান বাজার শহরের পুরাতন বাস ষ্টেশনের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার বাজারেও একই অবস্থা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লংগদু থেকে ২৮টি গরু নিয়ে এসেছে মোঃ নাজিম। কিন্তু বাজারে এসে তার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এখনো তার একটি গরুও বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, “হাটে এহনো মানুষ কম। যারাই আইতেছে দাম বলতাছে কম। ভাবছিলাম শুক্রবার কিছুটা হইলেও বিক্রি হইবো, কিন্তু এহনো হয় নাই। শেষ পর্যন্ত কেমন বিক্রি করতে পারমু বলতে পারতাছি না। এছাড়াও ১০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন আরেক ব্যবসায়ী পরিমল। তিনি জানান, গত ৪দিনে মাত্র ২টি গরু বিক্রি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এইবারে অনেক ব্যবসায়ী কম দামেই ছেড়ে দিচ্ছেন গরু। ২টি গরু বিক্রি করে ৬হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তারা উভয়েই সেই গরুগুলো পাহাড়ি ক্রেতাদের কাছ থেকে কিনে এনেছেন।
এইবারে রাঙ্গামাটির প্রধান পশুর হাট বসেছে পুরাতন বাস স্টেশন এলাকার ট্রাক ট্রার্মিনালে। পশুর কোন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন ট্রাক ট্রার্মিনালের গরু ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বাজারে ৩০ হাজার থেকে ১লক্ষ ২০হাজার টাকার মধ্যে গরু আছে। গরুর পাশাপাশি হাটে উঠেছে ছাগলও। আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩৫ হাজার পর্যন্ত। তারা আরো জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এইবার ছোট ও মাঝারী সাইজের গরুর চাহিদা বেশী। ৫০ থেকে ৭০হাজারের মধ্যের গরু বেশী বিক্রি হচ্ছে।
নানিয়ারচরের খামারিরা জানান, রাঙ্গামাটিতে গরু মোটাতাজা করতে কোন প্রকার ক্ষতিকারক ঔষধ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠে পাহাড়ি গরুগুলো। পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়ে উঠা গরুগুলো উজ্জ্বল বর্ণের এবং সুঠামদেহী। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বেড়ে উঠা রাঙ্গামাটির গরুগুলো চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায়। তাই ব্যবসায়ীরা পাইকারী দামে রাঙ্গামাটির হাট থেকে গরুগুলো বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন। লংগদুর উপজেলার মাইনি থেকে ৩৯টি গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ি আব্দুল আলিম গরুগুলো নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। জানায়, রাঙ্গামাটির গরুর বেশ চাহিদা রযেছে সেখানে। বোয়ালখালী গেলে বেশী লাভ করতে পারবো, তাই একটু বেশী খরচ গেলেও ট্রাকে করে গরুগুলো বোয়ালখালী নিয়ে বিক্রি করবো। গরু ক্রয় করতে আসা মোঃ মুছা জানান, গত বছরের তুলনায় এইবার প্রতিটি গরুর দাম ৫ থেকে ৭হাজার টাকা বেশী। এখনো গরু ক্রয় করা হয়নি। আরো ক’দিন অপেক্ষা করবো। আরেক ক্রেতা মোঃ বেলাল জানান, এখনো বাজারে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত গরু আসেনি। তাই গরুর দাম এখনো একটু বেশী। তবে সামনের দিনগুলোতে বাজারে আরো গরু আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
বাজারের ইজরাদার মোঃ রুহুল আমিন জানান, লকডাইনের কারণে এখনো বাজার জমজমাট হয়ে উঠেনি। আগামী ২দিন বাজারে আরো গরু আসবে। শেষের কয়েকদিন বিক্রি আরো বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কেনাবাচার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধিটা প্রত্যেকের মানা উচিৎ।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বরুণ কুমার দত্ত জানান, এইবার জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩২হাজার পশু এবং মজুদ আছে প্রায় সাড়ে ৩৫হাজার পশু। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এইবার রাঙ্গামাটিতে ১১টি পেইজের মাধ্যমে প্রায় ৩ শতাধিক গরু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।