কেউ খাওন দেয়না, তিনডা পুলামাইয়া আছে
রাঙ্গামাটিতে করোনায় সংক্রমণ বাড়লেও বাড়েনি সচেতনতা
॥ মোঃ আরিফুর রহমান ॥
দিন যত গড়াচ্ছে, লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা যেন ততই বাড়ছে রাঙ্গামাটিতে। বেশ কিছুদিন ধরে শহরের করোনা সংক্রামণ উর্ধ্বমূখি। শনিবার, রবিবার, সোমবার,মঙ্গলবার যথাক্রমে ২০, ১৬, ১১ এবং ১৪ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। তারপরও বাড়েনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা।
শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, কলেজগেইট, আসামবস্তি ও বনরুপারবিভিন্ন অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে,এলাকার দোকান খুলে কৌশলে বেচাকেনা চালাচ্ছেন দোকানিরা। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষ জটলা করছেন, কেনাকাটা করছেন পণ্য। আগের তুলনায় রাস্তায় বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রামণ আরো বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাঙ্গামাটি শহরেরবিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেট বন্ধই রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সড়কে যানবাহন বাড়ার পাশাপাশি ঘরের বাইরে কর্মব্যস্ত মানুষদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। শহরের প্রধান সড়কের দুইপাশে কৌশলেবিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলতে শুরু করেছেন দোকানিরা। গত কয়েক দিন ওইসব দোকানপাট বন্ধই ছিল।
বনরূপা ঘুরে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে কিংবা রাস্তার পাশে ফল আর সবজির পসরা আছে অনেকটা আগের মতোই। বাজারের সবজির দোকান, মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাও অনেক, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। পন্যবাহী যান আগের দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে এবং ফাকে ফাকে ভাড়া মারছেন সিএনজি চালকরাও।
এদিকে শহরের কাঠালতলী রোডে কথা হয় এক ভ্যনগাড়ি চালকের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘স্যার, আইজগা বহুত দিন ধইরা ঘরে বইয়া রইছি, কেউ খাওন দেয়না, তিনডা পুলামাইয়া আছে, বাইদ্দ হইয়া গাড়ি লইয়য়া বাইর হইছি’। শহরের পৌরসভায় টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য কেনার জন্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। টিসিবি’র বিক্রয় লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা পণ্য কিনছেন। লাইনে দাড়াঁনো আমীর হোসেন বললেন, ‘বাজারের তুলনায় কিছুটা কম পাওয়া যায় বিধায় তেল, চিনি, ডাল কিনতে এসেছি। মাস্ক তো পরেছি, লাইনে মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েছে, তাতে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কী করবেন, কেউ কথা শুনছে না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আমরা মধ্যবিত্তরা বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছি। তবে শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর উপস্থিতি। সরেজমিন গিয়ে যায়, পুলিশের কর্মতৎপরতা অব্যহত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছে। জনগণকে সচেতন করতে পুলিশ সদস্যদের প্রচারণা এবং মাস্ক বিতরণও আব্যাহত রয়েছে। থানা সুত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাঙ্গামাটির ১০টি স্থানে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সাথে নিয়মিত টহলে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এইদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে মাঠে অব্যাহত রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ০৯, ১০ ও ১১ জুলাই তারিখে যথাক্রমেশহরে মোট ০৫, ০৬ ও ০৫ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় এবং মাস্ক পরিধান না করায় মোট ২৯টি মামলায় মোট ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিত করা ও স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে মাইকিংও অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে জাতীয় কমিটির সুপারিশে এই লকডাউনের মেয়াদ আরো ৭ দিন বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসছে না।