[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
আলীকদমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনব্যাপী পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস প্রশিক্ষণখাগড়াছড়ির রামগড়ে বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালিতরাঙ্গামাটির লংগদুতে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ আটকবান্দরবানের থানচিতে পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিতরাঙ্গামাটির লংগদুতে ট্রলি উল্টে নিহত হেলপারসীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবেনা খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ৭বিজিবি’র সভাখাগড়াছড়ির গুইমারায় সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা আস্থার সেতুবন্ধনচিকিৎসক-জনবল সংকটে ব্যাহত খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাবান্দরবানের রোয়াংছড়িতে খিয়াং নারীকে ধর্ষণ ও নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিজিবি’র অভিযানে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জালিয়াপাড়া-মহালছড়ি সড়ক

রাঙ্গামাটির সাথে দূরত্ব কমে যাওয়ায় পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে

১০৪

॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে সব চাইতে আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। পার্বত্য অঞ্চলে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে বেশ পছন্দ রাঙ্গামাটির সাজেক। তবে সেখানে যেতে ব্যবহার করতে হচ্ছে খাগড়াছড়ি সড়ক। খাগড়াছড়ি সদর হয়ে দিঘীনালা উপজেলা পাড়ি দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক যেতে হয়। এছাড়াও শান্তিপুর অরণ্য কুটির, মানিকছড়ির মং রাজবাড়ি, আলুটিলা গুহা ও ঝর্না, দেবতা পুকুর, মায়াবিনী লেক, জেলা পরিষদ পার্ক ইত্যাদি বর্তমান দেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়িতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি থেকে শুরু করে এ অঞ্চল কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করেছে খাগড়াছড়ি জেলা। পাহাড়ের অন্য দুই জেলার চেয়ে অনেকটা উন্নত খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যা কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যটননির্ভর অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ি এ জনপদ। রাঙ্গামাটির ভৌগলিক অবস্থানগত বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের একচেটিঁয়া ব্যবসা এ জেলা থেকে অনেকাংশ নিয়ন্ত্রিত হয়। যার বড় একটা সুযোগ করে দিয়েছে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

খাগড়াছড়ির আরও একটি নয়নাভিরাম সড়ক বাড়তি আনন্দের মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের কাছে। আর রাঙ্গামাটি জেলা সদর ও নানিয়ারচর উপজেলার সাথে নতুন মাত্রায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে যাচ্ছে এ সড়কটি। দূর্গম এ পাহাড়ি জনপদের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত মানুষ গুলো যা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তা বাস্তবে পরিনত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে পায়ে হেঁটে এক সময়ে মহালছড়ি ও সিন্দুকছড়ি হয়ে জালিয়াপাড়া ও গুইমারা বাজারে যেতে হতো। সময়ও লাগত অনেক। কিন্তু বর্তমানে সেনাবাহিনীর আধুনিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে বদলে গেছে এ অঞ্চলের চিত্র।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া থেকে মহালছড়ি উপজেলার ২৪ মাইল পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি নির্মাণ করেছে। এ সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা থেকে রামগড় জালিয়াপাড়া হয়ে মহালছড়ির ২৪ মাইল এলাকা দিয়ে চালু হবে রাঙ্গামাটির সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। জালিয়াপাড়া-মহালছড়ি পর্যন্ত মাত্র ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের ফলে ঢাকা-রাঙ্গামাটির দূরত্ব কমবে ৭০ কিলোমিটার। আর সময়ও বাঁচবে প্রায় ৩ ঘন্টা। সড়ক যোগাযোগ ছাড়াও রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার কৃষি অর্থনীতিতে গতি আনবে এ সড়ক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ইতোমধ্যে পাহাড়ের কোলঘেষে আকাঁবাকাঁ সড়কের ভৌগলিক অবস্থান দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছে পর্যটকরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল যোগে নয়নাভিরাম সড়ক দেখতে সকাল থেকে সূর্যাস্থ পর্যন্ত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। চট্টগ্রাম থেকে দৃষ্টিনন্দন এ সড়ক দেখতে আসা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, অনেকদিন ধরে খাগড়াছড়ির জালিয়াপাড়া হয়ে মহালছড়ি সড়কটির কথা ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে দেখে সড়কটি দেখার আগ্রহ জাগে। যার ফলে আজকে সময় করে এসেছি। পাহাড়ের কোলঘেষে আকাঁবাকাঁ সড়ক দেখে মন ভরে গেছে। ফেনী থেকে আসা নুরু জানান, আমার এক আত্মীয়ের রাড়ি রাঙ্গামাটি। দূরত্বের কারণে ও সময় বেশি লাগত বলে তাদের দেখতে যেতে সমস্যা হতো। রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে শুনে গতকাল তাদের বাড়িতে বেরাতে এসেছিলাম। আজ আবার চলে যাচ্ছি। পাশাপাশি নয়নাভিরাম সড়ক যেমন দেখা হলো, অন্যদিকে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানোও হলো।

স্থানীয় ফলদ বাগানি হ্লাশিমং চৌধুরী বলেন, আম, ড্রাগনসহ মিশ্র ফলদ বাগানের ফল বাজারজাত করতে আগে খুব চিন্তা হতো। এ বছর কম সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রামে ফল যাচ্ছে সিন্দুকছড়ির নতুন সড়ক ব্যবহার করে। চাকুরীজীবি মিল্টন চাকমা জানান, বাড়ি মহালছড়ি। চাকরী করি গুইমারা উপজেলায়। আগে খাগড়াছড়ি সদর হয়ে জালিয়াপাড়া যেতে ৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো। এ নতুন সড়ক হওয়া এর দূরত্ব ২২-২৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। সময় ও খরচও কমেছে।

গুইমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উশেপ্রু মারমা বলেন, জালিয়াপাড়া থেকে মহালছড়ি সিন্দুকছড়ি সড়ক খাগড়াছড়ির দুই উপজেলাসহ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি ছাড়াও কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত রাঙ্গামাটির মৎস খাত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছি। সড়কটি পূর্ণাঙ্গ চালুর অপেক্ষায় এ অঞ্চলের মানুষ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. আমজাদ হোসেন দীদার জানান, এ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৫.৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক, ২৪ কিলোমিটার সাইড ড্রেন ও ৪১০ কিলোমিটার গ্রাভিটি ওয়াল, ৬৩০ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল ও ৮০০ মিটার প্যালাসাইডিং নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়ক নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রামের যানজট এড়িয়ে এ সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার সাথে যোগাযোগ চালু হলে দূরত্ব কমবে ৬৮ কিলোমিটার ও সময়ও বাচঁবে প্রায় ৩ ঘন্টা। প্রকল্প মেয়াদের ৬ মাস আগে কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার্স কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।