ঘর নির্মাণে ঠিকাদারের সাথে মৌখিক ভাবে চুক্তিবদ্ধ!
থানচিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
॥ চিংথোয়াই অং মার্মা, থানচি ॥
বান্দরবানে থানচিতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান পূর্বক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিতব্য একক গৃহ নিমার্ণ ও গৃহ বরাদ্ধের জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা মানা হচ্ছেনা। চলছে প্রধানমন্ত্রী উপহার ঘর নিমার্ণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ এলাকাবাসীদের।
এদিকে বলিপাড়া ইউনিয়নের মেনরোওয়া পাড়া সুবিধাভোগী লাংরোও ম্রো ও লাইতং ম্রো বলেন, আত্নীয় স্বজনদের কাছে ধার ও মহাজনদের কাছে ঋণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘর নির্মাণের জন্য ৩৪ হাজার টাকা মামুন কন্ট্রাক্টর হাতে দিয়েছিলেন। ঘরের কাজ শুরু করার সময় ফাউন্ডেশন করার নামে অতিরিক্ত ২০হাজার টাকা দাবী করলে ভাল মানের ঘর পাওয়ার আশায় ফাউন্ডেশন বাবদ মিস্ত্রি কাদেরকে ১৫হাজার টাকা দিয়েছি। ফাউন্ডেশনের জন্য অতিরিক্ত ইট কেনার কথা বলে ইট বাবদ ১২হাজার টাকা আবারও দিতে হয়েছে। পরে ঘরের ছাদ বাবদ মিস্ত্রিকে ২হাজার ২শত টাকা দিয়ে দিলেও নির্মিতব্য ঘর এখনো শেষ করা হয়নি। এত গুলো টাকা খরচ করার পরও এখনো ঘরের কাজ শেষ করে দেয়া হয়নি।
সম্প্রতিক থানচি সদর ও বলিপাড়া ইউনিয়ন এলাকার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর নির্মাণ সামগ্রীগুলো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মামুন দেয়া ইট, বালু, কাঠ ও শ্রমিকদের কাজের মান সবগুলোই নিম্নমানের দেয়া ও করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মনোনীত নিমার্ণ শ্রমিকদের কাজও আরো সোচনিয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুযায়ী কিউরিং ও বালু-সিমেন্ট মিশ্রণের সময় বালু (মাটি মিশ্রিত স্থানীয় বালু) পরিমাণ বেশী দিয়ে মিস্ত্রি জসিম, মিস্ত্রি জাকির সহ তাদের লোকজন গৃহ নিমার্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নির্মীতব্য গৃহের মান নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। নিমার্ণ কাজ শেষ হতে না হতে ঘরের ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মিতব্য গৃহ অসমাপ্ত অবস্থায় অনেক পাড়ায় পরে রয়েছে।
এদিকে থানচি সদর ইউনিয়নের সাধু যোসেফ পাড়া সুবিধাভোগী ফ্লাবিয়ান ত্রিপুরা মা রুস্পতি ত্রিপুরা (৬০) বলেন, গত বছর আমার ছেলের নামে একটি সরকারী ঘর পেয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় হলো নতুন ঘরে প্রবেশের আগে ঘরের ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ নতুন ঘরে আর উঠা হয়নি। ঘরের দরজা-জানালা গুলোও ঠিক মতো খোলা ও বন্ধ করা যাচ্ছে না। কন্ট্রাক্টর মামুনকে ঘর ফাটল বিষয়টি জানালেও তিনি আসবো আসবো বলে একবারও আসেনি। সরকারী এই ঘরটি এখন ঝুকিঁতে আছে, ফাটল গুলো ঠিক করা না হলে ভেঙ্গে ঘরটি ঢেঁলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বলিপাড়া ইউনিয়নের কমলা বাগান পাড়া সুবিধাভোগী গবিষন ত্রিপুরা বলেন, ঘরের মিস্ত্রিদের দৈনিক ২/৩বার চা নাস্তা খাওয়ানো হয়, তারা মুরগি চাইলে মুরগি দেয়া হয়। তারপরও আমার ঘরের কাজ তারা ভাল ভাবে করল না। সিমেন্ট কম, বালু পরিমাণ বেশি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে কন্ট্রাক্টর মামুনকে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থাই নেননি। এখনো অসমাপ্ত ভাবে ঘরটি পরে রয়েছে। কখন নাগাদ ঘরের কাজ শেষ করা হবে তাও জানিনা।
এ নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তারিকুল ইসলাম বলেন, ১ম ধাপে ৫০টি ঘরের কাজ শেষ করে ২য় ধাপে ৫০টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। ঘর নির্মাণের প্রাতিষ্ঠানিক দরপত্র দিয়ে কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয় নাই। মৌখিক ভাবে মোঃ মামুন নামে এক ঠিকাদারের সাথে ঘর নির্মাণের চুক্তিবদ্ধ হয় এবং তিনিই এই উপজেলায় সকল ঘর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত আছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী বলেন, বরাদ্দকৃত অনুসারের অত্র উপজেলায় যে এলাকা মালবাহী গাড়ি যোগাযোগ সম্ভব সে এলাকার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের নাম অন্তরভূক্ত করে ঘরটি তৈরী করা হয়। ঘর নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি জানেন না বলে উল্লেখ করেন।