গর্ত (কুয়া)’র নিঃসৃত পানি একমাত্র অবলম্বন
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিশুদ্ধ পানির সংকটে দুর্গম এলাকাবাসী
॥ আরিফুল ইসলাম মহিন,পানছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে এলাকাবাসী। পানিশূন্য এসব এলাকাগুলোতে এখন ছড়া কুয়োর পানি সংগ্রহে ব্যস্ত নারী পুরুষ। পানির অভাব দেখা দেয়ায় স্থানীয়রা বিকল্পভাবে পাহাড় ঘেঁষে গর্ত (কুয়া) করে তার থেকে নিঃসৃত পানি একমাত্র অবলম্বন হিসেবে নিয়েছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, পানছড়ি উপজেলার প্রফুল্লপাড়া,পাইয়্যংপাড়া, মরাটিলা, কাঠালতলা, উল্টাছড়ি, আলীনগর, রসুলপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে এখন পানির হাহাকার। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এলাকার বসবাসকারী লোকজন বিশুদ্ধ পানির অভাবে পরেছে। খাবার পানি, ধোয়ামোছা এবং গোসলের পানির জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় প্রাকৃতিক উৎস পাহাড়ি ঝর্ণা, ছড়া। পানির অভাব দেখা দেয়ায় স্থানীয়রা বিকল্পভাবে পাহাড় ঘেঁষে গর্ত করে তার থেকে নিঃসৃত পানি একমাত্র অবলম্বন হিসেবে নিয়েছেন। পাইয়্যং পাড়ার ইউপি সদস্য শিবু ত্রিপুরা জানায়, ১৫০ পরিবারের জন্য একটি মাত্র ডিপটিউবওয়েল আছে। তাতেও পানি আসে না।
অপরদিকে শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত অধিকাংশ ঝর্ণার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পানি সংগ্রহ করতে হয় পাহাড়ি ছড়ার ময়লাযুক্ত ঘোলা পানি, কিংবা গর্ত থেকে। অগভীর কুয়ায় চুঁইয়ে, চুঁইয়ে আসা পানি বাটিতে করে তুলে তা ছেঁকে কলসি নিচ্ছে। এভাবেই নিত্যদিনের পানি সংগ্রহে রীতিমতো সংগ্রাম বেশ কটি গ্রামে। সাবেক ইউপি সদস্য বরেন ত্রিপুরা বলেন, কাশিপাড়া মিল্টন পাড়ার অধিকাংশ বৃদ্ধ, যুবক-যুবতী প্রতিদিন বহুদূর পাহাড়ি পথ হেঁটে পানি আনতে যেতে হয়। শীতকাল থেকে পাহাড়ে শুরু হয় পানির কষ্ট ও হাহাকার। সংগ্রহ করা এ পানি দিয়ে নিত্যদিনের কাজ করতে হয়। দুর্ভোগের শিকার পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল আলী নগর, ওমরপুর, উল্টাছড়ির অনেকের সাথে কথা হয়। তারমধ্যে উল্টাছড়ি স্কুলের ছাত্রী আমেনা আক্তার, রাফিয়া বেগম, শাহানা আক্তার জানান, সরকার রিং টিউবওয়েল স্থাপন করলেও বর্ষা কালে পানি থাকে শীত শেষ হতে হতে পানি শুকিয়ে যায়, তখন পানির খুব কষ্ট হয়। পানির পাম্পেও পানি আসে না। সরকারীভাবে স্থাপনকরা টিউবওয়েলগুলো বসানোর সময় গভীরভাবে বেশী পাইপ দিলে হয়ত শুস্ক মৌসুমেও পানি পাওয়া যেত।
পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কর্মকর্তা ডাক্তার অনুতোষ চাকমা বলেন, ছড়া ও কূয়ার পানি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশুদ্ধ পানির অভাবে পেটের পীড়া সহ নানাহ চর্ম রোগ দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, পানছড়ির উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নির্ধারণ করে থাকেন। সে অনুপাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজ করে। এবছরও প্রায় ৩০০ গভীর-অগভীর নলকুপ বসানোর কাজ শেষের পথে। পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকায় পাথর থাকায় মাটির গভীরে পাইব নেওয়া যায় না। এছাড়াও এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।