॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥
মানিকছড়ি উপজেলাধীন ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে ভিজিডি কর্মসূচীর আওতায় চলতি এপ্রিল মাসের আতপ চাউল উপ-বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। যা গত ১৮ এপ্রিল থেকে বিতরনের কার্যক্রম শুরু করেছিল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ। ভিজিডির আওতায় উপজেলার ১ হাজার ৪শ ৬৪ জন সুবিধাভোগীর মাঝে ৩০ কেজি করে চাউল বিতরণের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বরাদ্ধকৃত খাদ্য শস্যের ছাড়পত্রের (ডি.ও) তথ্য গোপন করে আতপের পরির্বতে সিদ্ধ চাউল ছাড় করেন খাদ্য গুদামে দায়িত্বরত ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে আতপের পরিবর্তে নিন্মমানের সিদ্ধ চাউল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজড়ে আসে। পরের দিন (১৯ এপ্রিল) প্রাথমিক তদন্ত শেষে আতপের স্থলে সিদ্ধ চাউল সরবরাহের সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন এবং ভিজিডির চাউল বিতরণকালে নিন্মমানের চাউলের বস্তা পাওয়া গেলে তা খাদ্যগুদামে ফেরত দিয়ে পরিবর্তন করে নিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সচিবদের মৌখিকভাবে নির্দেশনাও দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়ার শেষ দিন বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে অভিযুক্ত ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন লিখিত জবাব দিয়েছেন বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সূত্রে জানান গেছে।
উপজেলা প্রশাসন ও সরকারি বরাদ্দপত্র সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১ হাজার ৪শ ৬৪ জন উপকার ভোগীদের মাঝে চলতি এপ্রিল-২১ মাসের ভিজিডি’র খাদ্য শস্যের ছাড়পত্রে গত ১১ এপ্রিল স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না মাহমুদ। একই দিন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জুলিয়াস চাকমা (ডিও নং- ৬৫৩৯১৬৮-৬৫৩৯১৭১) ছাড়পত্র প্রদান করেন। উক্ত ছাড়পত্রে আতপ চাউল বিতরণের নিদের্শনা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন ৪নং তিনটহরী ইউনিয়ন ব্যতিত অন্য ৩টি ইউনিয়নে অফিসিয়াল রেকর্ডপত্রে আতপ চাউল সরবরাহ করা হয়েছে দেখালেও বাস্তবে খাদ্য গুদাম থেকে তিনি সিদ্ধ চাউল সরবরাহ করেন। ফলে সরকারি অফিসিয়াল রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিনে বাস্তবচিত্রে সম্পূর্ণ গড়মিল পরিলক্ষীত হয়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরও জানা যায, অভিযুক্ত ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন বিভিন্ন সময়ে সরকারি বরাদ্দকৃত চাউল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কালোবাজারে বিক্রি করে কম দামী ও নিম্নমানের চাউল খাদ্য গুদামজাত করে তা ভিজিডি, গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন সময়ে তা সরবরাহ করেন।
এসবের প্রতিবাদ করায় অনেকেই তার কাছে অপমানিত হয়েছে। তার আচরণে এখন আর কেউ মূখ খুলছেন না। যা দিচ্ছে তাই নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প চেয়ারম্যান ও সবিচ তারাও অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন। এছাড়াও খাদ্য গুদাম থেকে চাউল মাপে কম দেয়ার মত অভিযোগ তো অনেক আগেরই রয়েছে!
আতপের পরিবর্তে নিন্মমানের সিদ্ধ বিতরনের ব্যপারের জানতে চাইলে খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান-সচিবদের অনুরোধেই নাকি তিনি আতপের পরিবর্তে সিদ্ধ সরবরাহ করেছেন। তবে অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো প্রকার কাগজপত্র প্রদর্শন করতে না পেরে অবশেষে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্যও তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন এবং বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখারও অনুরোধ করেন।
এদিকে গতকাল বুধবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।
মানিকছড়ি উপজেরা নির্বাহী অফিসার তামান্না মামহমুদ জানান, তিন কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত মানিকছড়ি খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি মোঃ শামিম উদ্দিন’র কাছ থেকে লিখিত কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দাখিল করেছেন। তার প্রদত্ত লিখিত জবাব খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে।