মাটিরাঙ্গায় কমলা’র বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠালেন সরকারী কর্মকর্তা
॥ আবুল হাসেম,মাটিরাঙ্গি ॥
প্রায় দুই যুগ পূর্বে থেকে স্বামী নিরুদ্দেশ,কোথায় আছে কেউ জানেনা। একমাত্র ছেলেও বিয়ে করে মাকে ছেড়ে স্বস্ত্রীক অন্যত্র চলে গেছে বেশ ক‘বছর আগে। সেই থেকে স্বামী-সন্তানহীন কমলা খাতুনের মাথা শেষ আশ্রয় হয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ির গৌরাঙ্গপাড়ার বাপের বাড়িতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,আসমানী কবিতার ন্যায় নিজ পিতার বাড়িতেই একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করেন কমলা খাতুন। ঘরের চার দেয়াল মাটি বেষ্টিত হলেও উপরে শূণ্য ছনের ছাউনি। সূর্য্যের আলো আর রাতের চাঁদের কিরণ তার ঘরের ছাউনি ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করে। বর্ষাকালের সীমাহীন দূর্ভোগ আর নিত্য দিনের অভাব স্বামী সন্তানহারা কমলা খাতুন যেন পৃথিবীতে এক নিরব অসহায়ত্বে দিন যাপন তার।
এক দিকে অভাব অন্যদিকে ভাঙ্গা ঘরে দিন পার করেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে ভাঙ্গা ঘরেই দিন কাটে তার। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবেশীরা যখন মুখরোচক খাবারে সেহরী ও ইফতার করেন তখন অন্যের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইফতার-সেহরী করেন কমলা খাতুন।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) শেষ বিকালের দিকে ‘এদের দেখার মত কেউ নেই’ শিরোনামে কিছু ছবি নিজের ফেসবুকে আপলোড করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবু তালেব। মুহুর্তের মধ্যেই এসব ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে। আর তখনই সকলের নজরে আসে স্বামী-সন্তানহারা কমলা খাতুনের দু:খ কষ্টের দৃশ্যপট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমলা খাতুনের এমন দুর্ভোগের কথা জানতে পেরে তাঁর বাড়িতে চাল, ডাল, তেল, পেয়াজ-রসুন,বুট মুড়ি ও খেজুরসহ রোজার মাসের খাবার পাঠালেন মাটিরাঙ্গা এক পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তার পক্ষে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকালের দিকে রোজা এবং ঈদের খাদ্য সামগ্রী কমলা খাতুনের বাড়িতে পৌঁছে দেন মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান ভ্ইুয়া। এসময় মাটিরাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবু তালেব, মেহেদী হাসান রিপন ও স্থানীয় শরীফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ওই কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবু তালেব বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তা কতোটা মানবিক হতে পারে তিনি সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। একই সাথে নিজের পরিচয় গোপন করে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
রোজার মাসে খাদ্য সামগ্রী পেয়ে ওই সরকারী কর্মকর্তার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করে কমলা খাতুন বলেন,রমজান মাসে আমাকে আর কষ্ট করতে হবেনা। আজ থেকে নিজের ঘরেই সেহরী ও ইফতার করতে পারবো। একই সাথে আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।