[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

লকডাউনের জের! মানিকছড়ি ও গুইমারার ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ফল

দুই উপজেলার আনারস ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা

৬৬

॥ মোঃ ইসমাইল হোসেন, মানিকছড়ি ॥

আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এসব উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ওজন কমাতেও সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার এবং অনেক কম ফ্যাট রয়েছে। অনুকূল পরিবেশ থাকায় এ বছর আগাম আনারস বাজারে এসেছে। দামও ভালো ছিল। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় আনারস বড় হতে না পারলেও ফলন ভালো হয়েছে। মানিকছড়ি ও গুইমারার দুই উপজেলার হাট-বাজার গুলো এখন আনারসের মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা। কিন্তু হঠাৎ কপালে দুশ্চিন্তার ভাঝ ফেলে দিয়েছে লকডাউন! করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় প্রকোপ মোকাবেলায় সরকারি ভাবে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই আনারসের বাজারে ধস নেমেছে! পর্যাপ্ত বিক্রি না থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে আনারস। দমও কম! কার্যত জলের দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আনারস। ফলে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত! যে আনারস বিক্রি হত ২০ থেকে ৩০ টাকা প্রতি পিস। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১৫ টাকায়! লাভের কথা দূরে থাক! যে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাও উঠে আসবে কিনা সন্ধেহ! মহাসঙ্কটে আনারস ব্যবসায়ীরা। কিভাবে তা সামলাবেন, তাই ভাবাচ্ছে তারা। লকডাউনে সব শেষ!

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মানিকছড়ি উপজেলার গভামারা, ওসমানপল্লী, হাতিমুড়া, গচ্ছাবিল, জামতলা ও গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি, জালিয়াপাড়া, বড়পিলাক, সিন্দুকছড়িসহ উপজেলার বেশ কিছু এলাকার পাহাড়ী ও সমতল ভূমিতে বেশি আনারস চাষ হয়। ওইসব এলাকা থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পিকআপ ও জিপ বোঝাই করে হাতিমুড়া ও গুইমার বাজারে নিয়ে আসছে চাষীরা। সেখান থেকেও খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছিলেন মাত্র। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের কবলে পড়ে আনারসের দাম কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়ে পড়েছেন। দাম ভালো থাকলে যেখানে লাভের আশা করেছিলেন সেখানে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানান যায়, বেশি লাভের আশায় বাগান থেকে প্রতি পিস আনারস ১০-১৫ টাকা ধরে কিনেছেন তারা। বায়নাও করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাগান মালিকের সাথে শর্ত আছে যত দরে ফল কিনেছেন লাভ হোক আর ক্ষতি হোক যতদিন বাগানের ফল শেষ না হবে ততদিন ব্যবসায়ীকে আনারস গুলো দিতে হবে এবং নির্ধারিত দর অনুযায়ী দাম দিতে হবে। প্রতি পিস আনারস ঢাকায় পৌছাতে আরো ৪ টাকা খরচ হয়। সে হিসেব একটি আনারসের পেছনে তাদের খরচ পড়ে ১৪-১৯ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে ঢাকায় প্রতি পিস আনারস বিক্রি হচ্ছে ৮-১৪ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি পিস আনারসে তাদের ক্ষতি হচ্ছে ৫-৬ টাকা করে।

ব্যবসায়ী ও চাষী উভয়ই শঙ্কার কথা প্রকাশ করে বলেন, ইতোমধ্যে বাজারে আনারসের দাম কমতে শুরু করেছে! চাষাবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট চাষী ও ব্যবসায়ী উভয়ই কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীয় মোঃ তোফায়েল হোসেন জানান, ২ লক্ষ আনারস কিনেছিলেন ২৫ লক্ষ টাকায়। ১ লক্ষ বিক্রি হলেও ক্ষেতে পড়ে আছে আরও ১ লক্ষ আনারস। বর্তমানের ন্যায় বাজার কমের দিকে থাকলে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে তিনি।

হাতিমুড়ার আনারস ব্যবসায়ী মোঃ রুহুল আমি, তিনিও প্রায় ৮ লাখ আনারস বায়না করে রেখেছেন বাগান মালিকের সাথে। যার বাগান মূল্য প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৩ লক্ষ আনারস বিক্রি করে তার ৮ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। বাকি আনারস এখনও ক্ষেতেই রয়েছে। তিনি আরো জানান, বাগান মালিকরা আনারস কেটে নিয়ে যেতে বলছেন। কারণ বাগানে আনারস পাকতে শুরু করেছে। কিছু আনারস বাগানেই পঁচা শুরু করছে। লকডাউনের মধ্যে যদি আর বাজার ভালো না যায় এবং দাম যদি কমতেই থাকে তাহলে সব মিলিয়ে ৪০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

হাতিমুড়া ও গুইমারার আরেক আনারস ব্যবসায়ী মোঃ জসিম উদ্দিন ও ৭ লক্ষ আনারস কিনেছেন। তারও বাগান মূল্য প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ আনারস বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাকি আনারস বাগানে আছে।

ব্যবসায়ী মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, বাগানে ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। তবে লকডাউনের কারণে ঢাকাতে বেচাবিক্রি নেই। প্রতি গাড়িতে আনারস ধরে প্রায় ৮-২০ হাজার। যার মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মত। বর্তমানে ঢাকায় দাম কমে যাওয়ার কারণে প্রতি গাড়িতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতি না থাকলে ভাল ব্যবসা করতে পারতাম। আমিও প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার আনারস কিনেছি। বিক্রি করেছি মাত্র ৫০ হাজার। বাকি আনারস বাগানে। বাজার ভালো থাকলে হয়তো প্রায় ২ লক্ষ টাকা আয় হত। কিন্তু এখন কি হবে বুঝে উঠতে পারছিনা।

আরেক আনারস ব্যবসায়ী মোঃ জাকির আকন, তিনি সর্বোমোট সাড়ে ৫ লক্ষ আনারস কিনেছেন। যার ক্রয়মূল্য প্রায় ৭৭ লাক্ষ টাকা। মাত্র ৭০ হাজার আনারস বিক্রি করেছেন। এতে তার ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
হাতিমুড়া আনারস ব্যবসায়ী সমিতিতে ২৭ জন সদস্য রয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে প্রায় দেড় কোটিরও বেশি আনারস চাষাবাদ হয়েছে এ বছর। যার কারণ প্রতিটি পরিবারেরই সর্বনিম্ন ৫০ হাজার আনারস চাষাবাদ করে থাকেন পারিবারিক ভাবে। প্রতি বছরই লাভের আশা তারা এ চাষাবাদ করে থাকে। তাদের দাবী সবমিলিয়ে বাজার দর না বাড়লে এ অবস্থা থাকলে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অভিযোগ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি গাড়ি ঢাকা যেতে তাদের খরচ হয় প্রায় ১৪-২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। যার মধ্যে পথেই খরচ প্রায় ৭ হাজার টাকা। পকেটে খাবারের টাকা থাক বা নাই থাক কিন্তু রাস্তার খরচের টাকা রাখতেই হবে পকেটে। এছাড়াও পুলিশকে না দেখে সিগন্যাল অমান্য করলে খরচ আরো বেড়ে যায়। তার উপরে বর্তমানে লকডাউনের কারণে গাড়ির মালিক ও ড্রাইভাররা অতিরিক্ত টাকা দাবী করে বসে আসেছন। তাদের দাবী ঢাকায় আনারস পৌছানোর পরের দিন যদি আনারস বিক্রি না হয় তাহলে গুনতে হবে ২৫০০ হাজার টাকা। যেখাানে লকডউনের আগে মাত্র ৫০০ টাকা দিতে হতো। তাদের দাবী রাস্তায় অতিরিক্ত টাকা খরচ হয় তাতে তাদরে দুঃখ নেই তবে পুলিশ তাদের খুব হয়রানি করে।

আরেক ব্যবসায়ী বলছেন, বাগানে আনারস পেঁকে-পঁচে নষ্ট হওয়া শুরু করছে, তাই কম দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এ বছর লাভতো দুরের কথা কত টাকা ক্ষতি হয় সেটি এখন দেখার বিষয়। বড় লাভের আশায় ব্যাংক ঋণ, সুদ ও ধার করে আনারস ব্যবসায় নেমেছিলেন। আর ঠিক ওই সময় বাধ সাধলো করোনা। করোনার মোকাবিলায় দেশজুড়েই চলছে লকডাউন। শেষমেষ কি হয় জানিনা!

গুইমারা উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুর রহিম মজুমদার জানান, উপজেলা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সকল কাগজপত্র আমাদের উপজেলায় স্থান্তর করা হয়নি। হাফছড়ি ইউনিয়নের হিসেব থাকছে রামগড় উপজেলায়,সিন্দুকছড়ির হিসেবে মহলছড়ি উপজেলাতে ও গুইমারার হিসেব মাটিরাঙ্গা থাকার কারণে গুইমার উপজেলায় কত হেক্টর জমিতে আনারসের চাষাবাদ হচ্ছে তার সঠিক হিসেব রাখা সম্ভব হয়নি।
এ দিকে মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, মানিকছড়িতে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে কৃষরা বাগানে ফল বিক্রি করাতে তাদের ক্ষতির পরিমান কম হলেও বাগান থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা আনারস কিনেছেন তাদের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি।