বান্দরবানে তুলা চাষের লাভজনক আশায় চাষীরা
॥ আকাশ মার্মা মংসিং, বান্দরবান ॥
বান্দরবান সহ সারাদেশে কার্পাস তুলার বছরে চাহিদা বেড়ে দাড়িয়েছেপ্র্রায় ৭০ লক্ষ বেল। যা পার্বত্য এলাকাসহ সর্বত্র অঞ্চলে প্রত্যেক বছরই তুলা চাষের বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুম চাষের পাশাপাশি তুরা চাষ করছেন জুমিয়ারা। ফলে তুলার চাহিদা মেটাতেও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন এসব কৃষকরা।
বান্দরবান জেলা সদরে মংপ্রুছড়া গ্রামে লালন কুমার চাষী জানান, কয়েকবছর আগে তিনি ধানের পাশাপাশি তামাক চাষ করতেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন যে তামাক চাষের লাভ বলতে নাই, শুধু তামাক পিছনে ব্যয়বহুল। কারন তামাক চাষ করার আগে অনেক অংকে টাকা ঋণ গ্রহণ নিতে হয় কোম্পানীর কাছ হতে। পরে ঘরে সেই ফসল উঠার পরে সেই ঋণের পরিশোধ মাধ্যমে পর অতিরিক্ত অর্থ তার কাছে থাকেনা। তাই তিনি তামাক ছেড়ে দিয়ে তুলা চাষের দিকে অগ্রসর হলেন। তিনি ২০১৭ সালে বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এসে বিস্তারিত জানার পর তুলা চাষের আগ্রহী হলে প্রতি বছরই ২ থেকে ১.৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করেন। এতে পরিশ্রম কম এমনকি ফলন বেশী পাওয়ার কারনে তিনি মনে করেন তুলা চাষের পরিশ্রম ও ব্যয় কম কিন্তু অত্যন্ত লাভজনক। এই তুলা ফসল চাষের জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড বীজ স্যার, ও কীটনাশক চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরন করে, এতে চাষীরা অত্যন্ত উপকৃত হচ্ছে।
চাষী লালন কুমার চাকমা আরো জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা এসে মাঠ পরিদর্শন করে সপ্তাহে ২-৩ দিন ফসলে অবস্তা পোকা মাকর সম্পর্কে করনীয় সহ যাভাবে হাতে কলমে শিখিয়ে দান তাতে আমরা উপকৃত হয়। তিনি আরো বলেন, বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজস্ব পরিবহন দিয়ে বস্তা দিয়ে যায়,যা আমরা বীজ গুলো শুকিয়ে বস্তা ভর্তি করে রাখি। এমনকি তার পাশাপাশি সরকারে নির্ধারিত নগদ মূল্যে বীজ তুলা নিয়ে যায়। তাই এই তুলা চাষের পরিশ্রম কম ও স্বপ্ল ব্যয় বলে সকল চাষী এই তুলা চাষের আগ্রহী হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
তুলা চাষী সুইচিং মার্মা জানান, আমার এই প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১২-১৫মণ পর্যন্ত তুলা হতে পারে। এই দ্বিগুন তুলা হবে বলে তিনি আনন্দিত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, তামাক চাষে যে পরিমানে শ্রম ও ব্যয় করতে হয় তা এই তুলা চাষে করতে হয় নাহ। তুলা চাষ করা পর পাশাপাশি বোর্ডের অফিসে কর্মচারীগন সপ্তাহে ২-৩ বার পরিদর্শন করে যান। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মৃধা জানান, পার্বত্য এলাকায় নদী বা ঝিড়ির পাশে যা সমস্ত স্থানে ও জমিতে তামাক চাষ হত ওই সমস্ত জায়গাতে তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত,যার ফলে পার্বত্য এলাকা তুলা চাষে জমি বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ী ঢাল যেখানে জুম চাষ করেসেইখানে সারি পদ্ধতি মাধ্যমে তুলে চাষ করা যায়। পাহাড়ে পরিত্যাক্ত জমি পরে আছে যেখানে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি পানি জমে থাকেনা ওপানিতে ডুবে যায়না কিংবা পাহাড়ে ঢাল যেখানে একবার জুমচাষ করার পর ১-৩ বছর খালি থাকে ওই সমস্ত জমিতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ মাধ্যমে তুলা চাষ করা সম্ভব। এইদিকে বান্দরবান তুলা বোর্ড তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ গেল অর্থ বছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ৬১৭৫ হেক্টর জমিতে তুলা আবাদ হয় আর উৎপাদন হয় প্রায় ২০৮৮ টন। তবে চলতি বছরে ৬২০০ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হয়েছে যার প্রেক্ষিতে প্রায় ২১৫০ টন তুলার উৎপাদন আশা রাখছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ।