[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
রাজস্থলীতে ‘হিট স্ট্রোকে’ ওয়ান ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের মৃত্যুবাঘাইছড়িতে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) এর বাজার বয়কটথানচিতে সাংবাদিক হিমংপ্রু এর মা পরলোক গমনবান্দরবানের থানচিতে ১৩মাস পর পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহারজিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে কাপ্তাইয়ে দুস্থদের মাঝে চাল বিতরণবান্দরবানে খুলে দেয়া হয়েছে লামা উপজেলার সকল রিসোর্টসীমান্তে পুশইন ও চোরাচালান ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বাঘাইহাট বিজিবিলংগদু উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবির টহল জোরদার: লে. কর্ণেল নাহিদ হাসানরাঙ্গামাটিতে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক আটকপুশইন ও চামড়া পাচার রোধে রামগড় ৪৩ বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

রাঙ্গামাটি মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি

১০৮

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। অনুপস্থিত থাকেন এবং পরে এসে হাজিরা খাতায় একত্রে স¦াক্ষর করেন।স্থানীয় ওই প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষকের ভয়ে প্রতিবাদ করতেও ভয় পায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মিরন খীসা ২০০৩ সালে থেকে প্রায় ১৮বছর পূর্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে অদ্যাবধি কর্মরত রয়েছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন এবং পরে এসে হাজিরা খাতায় একত্রে স¦াক্ষর করেন। তার এমন উপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহকারি শিক্ষকগণও নিয়মিত পাঠদানে অলসতা করেন। এসব কারণে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংকটসহ ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে। তারা আরো অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি,ফরম পূরণ বাবদ ১১ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। কোন শিক্ষার্থী যদি এ টাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেয়া হতো না।

এছাড়াও ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মহাপুরম উচ্চবিদ্যালয় এর শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব হতে ১৮টি ল্যাপটপ মধ্যে ১২টি ভালো ল্যাপটপ চুরি হয়ে যায়। কিন্তু বাকি ৬টি ল্যাপটপ নষ্ট হওয়ায় চোরে রেখে যায়। অথচ যে রুমে ল্যাপটপ রয়েছে, সে রুমে প্রধান শিক্ষক মিরন খীসা নিজেই রাত্রিযাপন করেন। তাহলে ল্যাপটপ চুরির রহস্য কোথায়? প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপ চুরি সংক্রান্ত ব্যাপারে থানায় জিডি এবং জেলা শিক্ষা বিভাগ (রাঙ্গামাটি) তদন্ত করেছেন। কিন্তু আজও তদন্তের রিপোর্ট কেউ চোখে দেখেনি। ইতোমধ্যে ল্যাপটপ চুরি হওয়ার পর তিনি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে চাপ প্রয়োগ করে থেকে ৩শত টাকা করে চাঁদা নেন এবং বিদ্যালয়ের টাকা দিয়েই তিনি রাঙ্গামাটি শহরের মধ্যে আমানতবাগ এলাকায় এতিম খানা সংলগ্ন ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করে বলে অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন একই বিদ্যালয়ে চাকুরি করার কারণে বিদ্যালয়টিকে নিজের খেয়াল-খুশি মতো পরিচালনা করে আসছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং তার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে যাতে কেউ বাঁধা হয়ে দাড়াঁতে না পারে, সে জন্য তিনি কৌশল অবলম্বন করে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে আসছেন। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকারসহ তাকে অন্যত্র বদলীর দাবী জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান ও সাবেক একাধিক সদস্যরা। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় শিক্ষা অফিস কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় এমনটি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তারা আরো জানান, বুড়িঘাট ইউনিয়নের বহু পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মহাপুরম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বিএনপি’র অঙ্গসংগঠন নানিয়ারচর উপজেলার জিয়া পরিষদ নামে একটি সংগঠনের সহ-সভাপতিও। তিনি একটানা ১৮ বছর যাবৎ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে পদে পদে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির শেষ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রমোদ খীসা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে সবগুলো মিথ্যা-বানোয়াট। তাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাকে প্রধান শিক্ষকের জায়গা ক্রয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই জায়গাটি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ক্রয় করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কোন ফি আদায় করা হয় না বলে উল্লেখ করেন।

এসব ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মিরন খীসা জানান, কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাশ না করলে প্রতি বিষয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। এটি নিয়মে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মে নেই, তবে মানবিক কারণে নেওয়া হয়। ল্যাপটপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ল্যাপটপ চুরি হওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরো ১১টি ল্যাপটপ ক্রয় করেন শিক্ষার্থীদের আইসিটি ক্লাসের জন্য। এরমধ্যে শুধু একটি ল্যাপটপ ক্রয়ের জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩শ টাকা করে নেওয়া হয়। জায়গা ক্রয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রীও চাকরি করেন এবং তিনিও চাকরি করেন ব্যাংক লোন নিয়ে এই জায়গা ক্রয় করেছেন। তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীদের অনেক টাকা বকেয়া থাকে। বকেয়া টাকা সহ সব টাকা যোগ করে ফরম পূরণ করার সময় নেওয়া হয়।

রাঙ্গামাটি জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, নানিয়ারচর উপজেলার মহাপুরম উচ্চবিদ্যালয়ে ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও তাদের কাছে লিখিতভাবে কোন অভিযোগ করেননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি আছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে পাশ না করলে তার কাছ থেকে প্রতি বিষয়ে ২০০ টাকা করে নিয়ে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার কোন নিয়ম নেই বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের আগেই এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। তৎকালিন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল কায়দে আজম মেমোরিয়াল জুনিয়ার হাই স্কুল। পরে ১৯৭৮ সালে নাম পরিবর্তন করে মহাপুরম উচ্চবিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। তৎকালিন সময়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন, মধু মঙ্গল চাকমা। প্রায় ১০ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠাটির অবস্থান। প্রধান শিক্ষকসহ ১১ থেকে ১২জন শিক্ষক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ২-৩শ’ শিক্ষার্থী। এবং শতভাগ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি।