২৬ দিনের ধর্মীয় সফরে জুরাছড়ি’র গুইছড়ি যাচ্ছেন ড. এফ দীপংকর মহাথের
যারা বৌদ্ধ ধর্মকে আঁকড়ে ধরতে চায় তাদের উপর সহায় থাকুন, বিনয়ী হোন
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
পূজনীয় আর্য্য শ্রাবক সাধনানন্দ মাহস্থবীর বনভান্তের একমাত্র অনুসারী দেব মানব পুজ্য অরণ্য বিহারী,শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী পাংশুকুলিক ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন জাতি গোষ্টির মঙ্গলের জন্য তাঁদের স্ব-স্ব ধর্ম পালনে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা হয়। কিন্তু বৌদ্ধ মন্দির, ভিক্ষুত্ব গ্রহনের জন্য ঘ্যাং ঘর হলে বাঁধা প্রদান করা হয়। বৌদ্ধ সমাজ দ্বারা ধর্ম লালন পালনে স্বধর্মের যারা বাঁধা প্রদান করছেন তাঁরা না হয় ধর্ম লালন-পালন করলেন না কিন্ত যাঁরা করছেন তাদেরকে কেন বাঁধা দেয়া হবে। যেখানে আমিও আমার নই, সেখানে আমারতো কিছুই নেই। বুদ্ধ এবং বৌদ্ধ সমাজের কল্যাণেই আমার সাধন জীবন এবং মানুষের কল্যাণেই গমনাগমন। গত সোমবার বান্দরবানস্থ আর্যগুহা ধূতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের-কে দর্শনে গেলে সাপ্তাহিক পাহাড়ের সময় সম্পাদক ও প্রকাশক এর সাথে নানান ধর্মালোচনায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
ড. এফ দীপংকর মাহাথের বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমাজ নানান প্রতিকুলতায় দিন যাপন করছেন। দুঃখ মুক্তি এবং মানব জীবনের সুখ শান্তির জন্য ধর্ম লালন পালনে উদগ্রীব সাধারন মানুষগুলোকে ধর্ম পালনে বাঁধা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ভারতের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Socio-religious Condition of ancient India as depicted in the inscription of Asia’ ’ বিষয়ে ২০১১ সালে পিএইচডি ডিগ্রী সমাপ্ত করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি উপলব্ধ করেন, সব জায়গায় ছল-কপট, প্রতাড়না, প্রবঞ্চনা, স্বার্থপরতা এবং মিথ্যাচার দেখে ২০১২ সালের শেষের দিকে বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপপানিছড়াস্থ গভির জঙ্গলে সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। টানা সাত বছর কঠিন ব্রত নিয়ে তিনি ধ্যান সাধনায় মত্ত ছিলেন। বিলাইছড়ি জুরাছড়ি উপজেলা পুন্যবান মানুষগুলো বৌদ্ধ ধর্ম লালন পালনে যে ভুমিকা পালন করেছেন তা অতুলনীয়। কিন্তু সেখানের মানুষগুলোকে স্বধর্মের কিছু অধার্মিক মানুষ তাদের নানান অত্যাচার নিপীড়ণ করেছে এমন কি তাঁকে (ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের)কে পার্বত্য চট্টগ্রামে জায়গা না দেয়ার জন্যও বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বৌদ্ধ সমাজ তথা ধর্ম এবং ধার্মিক মানুষগুলোকে রক্ষায় নিপীড়ণকারীদের বকেছি কিন্ত তাই বলে কি তাঁদেরকে ছুঁড়ে ফেলেছি তাও নয় বরং অধার্মিকতার পথ পরিহার করতে আশির্বাদ করছি, ধর্ম দান করছি। তিনি বলেছেন, কেউ যদি ধর্ম লালন-পালন না করে তাতে বলারইবা কি আছে, কিন্তু যারা ধর্ম লালন-পালন করছে তাদের যেন বাঁধা দেয়া না হয়, অত্যাচার নিপীড়ণ না করে তার জন্য আদেশ করছি।
ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের বলেছেন, যেখানে আমিও আমার নই, সেখানে আমারতো কিছুই নেই। বুদ্ধ এবং বৌদ্ধ সমাজের কল্যাণেই আমার সাধন জীবন এবং মানুষের কল্যাণেই গমনাগমন। গত ১৫ মে বিলাইছড়ির ধুপশীলস্থ ‘ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদির্শন ভাবনা কেন্দ্রটি’ বুদ্ধমুর্তিসহ রাতে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে দুই কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে বলে বৌদ্ধ সমাজ জানিয়েছে। অথচ এসব সম্পদতো আমারও নয়। এসব বৌদ্ধ সমাজ এবং ধার্মিক মানুষেরই সম্পদ। আমিতো তাদের দুঃখ মুক্তির পথপ্রদর্শক। কিন্তু দুঃখ মুক্তির জন্য যারা ধর্মকে লালন পালন করছেন তাদের উপর কেন এত অত্যাচার।
এদিকে ধুতাঙ্গ মহাথের এর প্রধান সেবক মেগি ভিক্ষু বলেছেন, জুরাছড়ি উপজেলার বৌদ্ধ সমাজের দায়ক-দায়িকা ও উপাসক-উপাসিকাগন দেব মানব পুজ্য অরণ্য বিহারী, শ্মশানচারী, ত্রি-চীবরধারী পাংশুকুলিক ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের কে ফাং (আমন্ত্রণ) করেছেন। তিনি বৌদ্ধ সমাজের এবং মানুষের কল্যাণে তাদের ফাং (আমন্ত্রণ) গ্রহন করেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বের বান্দরবানের আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহার থেকে জুরাছড়িস্থ গুইছড়ি আর্যচুগ ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে গমন করবেন এবং ২২ জানুয়ারী তিনি বান্দরবানে ফিরে যাবেন। এছাড়াও বিলাইছড়ি উপজেলার দায়ক-দায়িকা ও উপাসক-উপাসিকাগন ফাং (আমন্ত্রণ) করেছেন। তাই ধূতাঙ্গ সাধক ড. এফ দীপংকর মাহাথের ৯ ফেব্রুয়ারী বিলাইছড়িস্থ ধুপশীল মহাশ্মশানে ‘ধর্মপ্রিয় আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র’ এ যাবেন এবং সেখান থেকে ২৩ এপ্রিল আবারো বান্দবানস্থ আর্যগুহা ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বিহারে ফিরে যাবেন।