[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
খাগড়াছড়িতে অপহৃত ৫শিক্ষার্থীর মধ্যে লংঙি ম্রো বান্দরবান উপজেলা আলীকদমেরখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই কোচিং সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাখাগড়াছড়ির রামগড়ে দুই বসতবাড়ি আগুনে ভষ্মিভুতদীঘিনালায় গার্ল গাইডস এসোসিয়েশনের ৫দিনব্যাপি বিজ্ঞপাখি মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নখাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাড়ির সদস্যদের অজ্ঞান করে দূর্ধষ চুরিগুণগত শিক্ষা জাতিগত ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিতে পারবে: রাঙ্গামাটিতে জলখেলি অনুষ্ঠানে সুপ্রদীপনৃ-গোষ্ঠীর আগে ক্ষুদ্র শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না: জলকেলীতে উপদেষ্টা সুপ্রদীপবান্দরবানের আলীকদমে মার্মা সম্প্রদায়ের মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ-২০২৫ উৎসব পালনপুরোনো দিনের গ্লানি মুছে যাক সাংগ্রাইয়ের মৈত্রীময় জলেবান্দরবানের থানচিতে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের গুড ফ্রাইডের উপহার দিলেন সেনাবাহিনী
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

৯টি সামাজিক ছাত্র সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

বান্দরবানের মানববন্ধন ছিল সাজানো নাটক

১১৬

॥ আকাশ মার্মা মংসিং, বান্দরবান ॥

বান্দরবান চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণে উদ্যোগী সংস্থাসমূহের প্রতারণামূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি সামাজিক ছাত্র সংগঠন। বুধবার (১৮নভেম্বর) রাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিতে বলা হয়, বান্দরবান জেলায় চিম্বুক পাহাড় সংলগ্ন কাপ্রু ম্রো পাড়ায় পাঁচতারা হোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী ম্রো জনগোষ্ঠীসহ সারা দেশের সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী মহল যেভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ম্রো জনগোষ্ঠীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাতে বিচলিত হয়ে হোটেল স্থাপনে উদ্যেক্তামহল ছল, বল, মিথ্যাচার ও চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বান্দরবানে মানববন্ধনের নামে এক সাজানো নাটকের আয়োজন করেছে বলে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি), ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (বিএমএসএ), উন্মেষ, রক্তদাতা সংগঠন, রাঙ্গামাটি, বাংলাদেশ তঞ্চগ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম (বিটিএসডাব্লিউএফ), বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন (বিআরএসএ), দ্য বম স্টুডেন্টস্ এসোসিয়েশন (বিএসএ), বাংলাদেশ খেয়াং স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন (বিকেএসইউ) ও বাংলাদেশ খুমী স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল (বিকেএসসি)।

এতে বলা হয়, ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার আলিকদম বাজার থেকে তার আগের দিনে সাপ্তাহিক হাটবারের দিনে আসা প্রায় ১২০ জন ম্রোকে ধরে নিয়ে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে একরাত রেখে পরেরদিন মানববন্ধনের জন্য জোরপূর্বক গাড়িতে করে বান্দরবান প্রেস ক্লাবে পাঠানো হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে, যা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। এভাবে তাদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছু নয়। তাদেরকে যে এক রাত আটকে রাখা হলো এটা তাদের ও তাদের পরিবারের উপর ছিল এক ধরনের মানসিক নিযার্তন। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। কেউ কাউকে জবরদস্তি করতে পারেনা, যা আইনের শাসনেরও পরিপন্থি।

বিবৃতিতে গতকালের মানববন্ধনকে সাজানো নাটক মন্তব্য করে আরও বলা হয়, এ নাটকের আয়োজকরা ম্রো জনগোষ্ঠীকে তাদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগের সাথে জড়িত। বান্দরবান শহরের লেমু ঝিরি আগা পাড়া ৩০ জন নারীকে স্থানীয় এক ইউপি মেম্বার ‘চাল বিতরণ করা হবে’ জানিয়ে বান্দরবান প্রেস ক্লাবে পাঠিয়ে দেয়। বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে আসলে তাদেরকে মানববন্ধনের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। একই মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বান্দরবান সদর মৌজার ক্যচিং পাড়া থেকেও ১০ জন নারীকে আনা হয়। আলিকদম থেকে আসা মেনরং ম্রো জানান যে, বান্দরবান সদরে মিটিং আছে বলে তাকে সেনা সদস্যরা বান্দরবানে পাঠিয়ে দেয়।

বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়,, আন্দোলনরত ম্রো জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আন্দোলন ও প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য ভয়—ভীতি দেখানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আমরা জানতে পারি যে, বান্দরবান সেনাবাহিনী নিজেদের ভাবমূর্তিকে রক্ষা করতে এবং পর্যটন স্থাপনাকে বৈধতা দিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কৃত কাজী মুজিবরকে দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছে যা একটা সুশৃংঙ্খল বাহিনীর জন্য মোটেও মযার্দাকর বিষয় নয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ম্রো আদিবাসীদের উপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৯০ সালে। সেসময় সেনাবাহিনী ফায়ারিং রেঞ্জের জন্য প্রায় ১১ হাজার একর ভূমি সেখানকার জনগোষ্ঠীদের মতামত উপেক্ষা করে অধিগ্রহণ করে। এগুলোর অধিকাংশই ছিল ম্রোদের জমি। এর ফলে শত শত ম্রো পরিবার উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। এতে তাদের জীবনযাত্রা ও জীবিকা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। দ্বিতীয়বার ২০০৬ সালে ওই এলাকার বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সমর্থন নেওয়া তো দূরের কথা, কোনরকম নোটিশ না দিয়ে ভাগ্যকুল, কদুখোলা, সুয়ালক ও টংকাবতির পাহাড়ে ৭৫০টি পরিবার নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জমি অধিগ্রহণের কারণে উচ্ছেদ হয়েছে।

সামাজিক ছাত্রসংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কাপ্রু ম্রো পাড়া থেকে নাইতং পাড়া হয়ে জীবননগর পর্যন্ত যে পাঁচতারা হোটেল ও অন্যান্য সুবিধা সংবলিত বিনোদন পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা ওখানকার প্রায় ১০ হাজার ম্রো আদিবাসীকে উদ্বাস্তু হওয়ার দিকে ঠেলে দেবে। এর ফলে ৪টি গ্রাম সরাসরি উচ্ছেদের কবলে পড়বে এবং ১১৬টি গ্রাম পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু তাই নয়, এ হোটেল কমপ্লেক্সকে ঘিরে পর্যটনের যে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠবে তা ম্রোদের সোশ্যাল প্রাইভেসি, তাদের চিরকালীন পরিচিত ও অভ্যস্ত পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তাদেরকে এক অচেনা জগতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে যা তাদের স্বতন্ত্র ঐতিহ্যন্ডিত জীবিকা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তাকে ক্রমশ নিমূর্লের পথে ঠেলে দেবে। চিরচেনা পরিবেশকে হারিয়ে ম্রোদের সেখানে টিকে থাকাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

বিবৃতি অভিযোগ করে বলা হয়, প্রতিনিয়ত পার্বত্য অঞ্চলে নামে-বেনামে আদিবাসীদের বিভিন্ন জায়গা দখল করে এগুলোর স্থানীয় নাম বদলে দিয়ে নতুন নামকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। “শোং নাম হুং” নাম চন্দ্রপাহাড় হয়ে যায়, “তেংপ্লং চূট” নীলগিরি হয়ে যায়। যে চিম্বুক পাহাড়ে একটাও প্রাইমারি স্কুল নেই, একটাও সরকারি হাই স্কুল নেই, সেখানে বিনোদনের জন্য বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়।

এতে বলা হয়, পাহাড়ে পর্যটকরা বেড়াতে আসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। বিলাসবহুল হোটেলে রাত্রি যাপন ও হোটেলে আমোদ-প্রমোদের জন্য নয়। তাই দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন ঢাকাসহ বিভিন্ন রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বিবৃতিতে ম্রোদের বাস্তুভিটায় পাঁচতারা হোটেল ও বিনোদন পার্ক স্থাপনের নামে উচ্ছেদের উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করা এবং ম্রোদেরকে বারে বারে তাদের জীবন ও জীবিকার উৎস থেকে উচ্ছেদের যে পরম্পরা চলে আসছে তার অবসানের দাবি জানানো হয়।