পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠির কৃষি কাজ বা চাষাবাদে শত শত বছরের লালন পালনে প্রতিষ্ঠিতদের একটি হলো জুম চাষ। আদিকাল থেকেই পাহাড়ে-পাহাড়েই চাষ হয় বলে এটিকে জুম চাষ বলা হয়। সমতল জমির পাশাপাশি পাহাড়ে পাহাড়ে শষ্য ফলিয়ে খাদ্যের যোগান দিয়ে চলেছে দেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠি আর্থৎ জুম্ম জাতি। জুমের ফসল ঘুরে তুলে সারা বছরের ভাতের মজুদ করা হয় জুম্মজাতি গোষ্ঠির ঘরে ঘরে। কালের ক্রমে চাহিদার তাগিদে একটি সময় শুধু ধান চাষ করা হলেও এখন জুম চাষে (পাহাড়ে) যোগ হয়েছে মিশ্র ফসলের সম্ভারও। দেশের সর্বজন পরিচিত এবং প্রিয় এ চাষাবাদকে দেখার জন্য, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য একটি সময় সমতলের অনেকেই জুম চাষ দেখতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেড়াতে আসতো। জুম চাষের ধানের শিষগুলো হেলে ধুলে হাঁসি ফোটাতো পাহাড়ে পাহাড়ে। জুম্ম জাতির ঐতির্হ্যরে চাষাবাদ সোনালী ফসল যখন ঘরে তুলতো তখন নানান সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও হতো, এ আয়োজন এখনো চলে এ জতি গোষ্ঠির মধ্যে।
বর্তমানে তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের ধানে এখন সোনালি রুপ ধারণ করেছে। চাষিদের ঘরে ঘরে চলছে আনন্দ। খুশিতে জুমচাষীরা আত্মহারা হয়ে তাদের চোখে মুখে এখন বিরাজ করছে হাসির ঝিলিক। জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। ঘরের শিশু কিশোরসহ পরিবারের কেউই বসেও নেই। পরিবারের সবাই জুমের ধান কাটতে নেমেছে পাহাড়ে। জুমচাষীরা বলেছেন পাহাড়ীদের আদিপেশা জুম চাষ। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ৭টি উপজেলায় বসবাসকারী পাহাড়ী পরিবারগুলো প্রায় সকলেই জুম চাষ করে থাকে। মারমা, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমী, লুসাই, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি সম্প্রদায়ের অধিকাংশরাই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমের উৎপাদিত ধান থেকে বছরের ১২ মাসের মধ্যে অন্তুত ৮ মাস তারা খাদ্যের জোগান মজুদ করেন জুমচাষীরা। পার্বত্য জেলার জুমচাষীরা প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত পাহাড়ে জুম চাষ করে, তবে ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।
জুম্ম জাতি গোষ্ঠি প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু করে জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩/৪ মাস পরির্চযার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করেন জুমিয়ারা। শেষ হয় অক্টোবর মাসে। বর্তমানে জুম চাষের ধানের পাশাপাশি মিশ্র ফসলের মধ্যে ভূট্টা, মরিচ, যব, সরিষা, মিষ্টি ও চাল কুমড়া, চিনার, বেগুন, কাকন ধান, মারফা, তিল, পুঁইশাক ও টকপাতাসহ হরেক রকমের শাক সবজি চাষ করেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জুম চাষ হয়েছে। এখন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে নবান্ন উৎসবও। গোত্র ভেদে পাহাড়ীরা উৎপাদিত ফসল দেবতাকে উৎসর্গের মাধ্যমে এই নবান্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে।
ঐতির্হ্যরে এ জুম চাষকে ধরে রাখতে আধুনিক নয় ঐতির্হ্যরে প্রযুক্তিকেই বেশী বেশী কাজে লাগাতে হবে। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয় দেশে পাহাড়ী অঞ্চলগুলোতে জুম্ম জাতি গোষ্ঠিকে সরকারের কৃষি বিভাগ আর্থিক বা কৃষি ঋণ সহযোগীতা করলে জুম চাষের মাধ্যমে খাদ্যের যোগানে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। তাই জুমের ফসল বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসুন। জুম্ম জাতি গোষ্ঠিকে বলা যায় এই ঐতির্হ্যের লালন পালনে মুষ্টিবদ্ধ হোন।