ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত, আটককৃতরা বিভিন্ন মামলার আসামী
অবশেষে খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৭ জন আটক
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের বলপেইয়া আদাম এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর এক প্রতিবন্ধী (২৬) নারীকে গর্ণধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে জড়িত সাত জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ঘটনার পর খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করতে সক্ষম হন। জড়িতরা পূর্ব থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত বলে পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আসামীদের আটকের পর রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার এক সংবাদ সম্মেলনে আটককৃতরা পেশাদার অপরাধী এবং লুন্ঠিত মালামালের কিছু জিনিসও উদ্ধার করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত আটক সাত জনকে রবিবার পুলিশ আদালতে হাজির করেন। আটককৃতরা হলো, মোঃ অন্তর (২০) পিতা- আহম্মদ উল্লাহ, মোঃ আব্দুল হালিম (২৮ পিতা- মোঃ হাবিল মিয়া, মোঃ আব্দুর রশিদ (৩৭), পিতা- শামছুল হক, মোঃ ইকবাল হোসেন (২১), পিতা- আকবর আলী, মোঃ শাহিন মিয়া (১৯), পিতা- আব্দুল কাদের, মোঃ বেলাল (৩২), পিতা-আকবর আলী, মোঃ আল আমিন (৪০), পিতা- মৃত আবুল কাশেম। আদালত শুনানী শেষে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, আটককৃতরা সবাই পূর্ব থেকেই নানান অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা পরিকল্পিতভাবেই এই অপরাধ সংঘটিত করেছে। পূর্ব পরিকল্পনা করেই বাড়িতে ডাকাতি এবং প্রতিবন্ধী ঐ নারীকে ধর্ষণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, ডাকাতি ও চুরির মামলাও রয়েছে। পুলিশ সুপার অরো বলেন, ঘটনার দিন লুটপাটের এক পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ঐ নারীর বাবা-মাকে ঘরের একটি কক্ষে বেঁধে রেখে উপযুপরি তাকে ধর্ষণ করে। পরে তারা পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয় অপরাধীরা আগে বিভিন্ন অপরাধে জেল খানায় থাকা অবস্থায় একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। সেখান থেকে অপরাধের ছক তৈরি করে অপরাধ সংঘটিত করে আসছে। সর্বশেষ খাগড়াছড়ির বলপেইয়া পাড়ায় অনেকটা নির্জন জায়গায় অবস্থিত ঘরে হামলার পরিকল্পনা করে। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটায়। মোঃ আমিন এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তার কথা মত সিএনজি চালক শাহিন রামগড় থেকে এবং অন্তর জালিয়াপাড়া থেকে ইকবালকে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটিরাঙ্গা থেকে সাইফুল, রশিদ ও বেলালকে নিয়ে খাগড়াছড়ি আসেন। এ সময় তাদের কাছে ছুরি, শাবল, দা সহ অস্ত্রসস্ত্র ছিল। খাগড়াছড়ির জিরোমাইলে পৌঁছালে মূলহোতা আমিন ও হালিম তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে সময় কাটিয়ে গভীর রাতে ঘটনাস্থলে যায়। শাহিন ও বেলাল ঘরের দেওয়াল বেয়ে ভেতরে ঢুকে মূল ফটক খুলে দিলে বাকিরা প্রবেশ করে। এ সময় রশিদ ও হালিম গেটে অবস্থান নেয় এবং আমিন, সাইফুল ও বেলাল ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। পরে শব্দ শুনে গৃহকর্ত্রীর ঘুম ভেঙে গেলে দরজার সামনে এসে ডাকাত দলের উপস্থিতি টের পান। তিনি চিৎকার করলে দ্রুত শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে। তাৎক্ষণিকভাবে ইকবাল, ফারুক ও শাহিন ওড়না ও চার্জারের তার দিয়ে তাদের হাত মুখ বেঁধে জানালার গ্রিলের সাথে আটকে রাখে। পরে প্রতিবন্ধী নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বেশ ক’জন নারী ধর্ষণ ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠনগুলো প্রতিবাদসহ জড়িতদের বিচারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে খাগড়াছড়ি শহরের বলপাইয়া আদামের ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠীর এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ ও বাড়ির মামালা লুট করার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ এবং জড়িতদের আটকের দাবিতে কর্মসুচি পালন করে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ অপরাধীদের ধরতে নানান স্থানে অভিযান অব্যাহত রাখে। স্থানীয় সচেতন মহল পুলিশ আসামীদের দ্রুত আটক করায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অপর দিকে হাসপাতাল সুত্র জানায়, শনিবার বিকেলে গণধর্ষণের শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের হেফাজতেই দেওয়া হয়েছে।