কাপ্তাই হ্রদ বাঁচাতে আইন প্রয়োগ করুন
এশিয়া মাহাদেশের বৃহত্তম হ্রদ কাপ্তাই। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্টার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে তৎকালীন সরকার কাপ্তাই উপজেলাস্থ বাঁধ নির্মাণ করলে বৃহৎ এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। হ্রদের কারনে পরবর্তীতে চাকমা সার্কেরে রাজবাড়ি সহ হাজারো পরিবার উদ্ভাস্তু হয়ে পড়ে। মানুষের জীবন যাত্রার বড় পরিবর্তন ঘটে যায়। এ বাঁধের কারনে বৃহৎ আকারে হ্রদের সৃষ্টি হলে এ হ্রদটি মাছের বড় একটি ভান্ডারেও পরিনত হয়। কিন্তু বৃহৎ এ হ্রদের জায়গা দিন দিন সংকুচিত হতে হতে তা বড় আকারেও ধারন করছে। পর্যায়ক্রমে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে সেই সাথে বাড়তে থাকে চাহিদা। বর্তমানে এ হ্রদের আশপাশে যারা বসবাস করতো চাহিদার তাগাদা থেকে যে যার মতো করে হ্রদের পাড় দখল করে নিজেদের ভাগে নিয়ে গেছে। পরবর্তী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সঠিক অব্যবস্থাপনা, দায়সারা গোছের হওয়ায় হ্রদ দখল হতে হতে তা বিরাট আকারে ধারন করেছে। এভাবে করতে করতে এখন হ্রদ হয়ে যাচ্ছে সংকুচিত।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের অজান্তে সরকারের সঠিক হ্রদ ব্যবস্থপনার অভাবে হ্রদের জায়গা দখল হয়ে পড়েছে। স্বল্প, পূর্ন এবং অর্ধ পাকা কাঁচা ঘর তৈরী করে মানুষ তাদের চাহিদাপূরন করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত অবকাঠামো তৈরী করেও হ্রদের জায়গা দখল করা হয়েছে। অর্থাৎ কাপ্তাই হ্রদকে নিয়ে যেন চলছে দখলে প্রতিযোগীতা। রাঙ্গামাটি শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন এলাকায় যেভাবে হ্রদের পাড় দখল করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তাতে যারাই এসব করেছেন তাদের জীবনও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। শহরের বেশ কছিু স্থান রয়েছে যা দেখতেও দৃষ্টিকটু। আবার একের দেখা অন্যেও দখল করেছে হ্রদের পাড়। স্থানীয় প্রশাসন কোন কোন সময় এসবের বিষয়ে অভিযান চালালেও তা ঢিমেতালের হওয়া দখলবাজরা দখলে স্থান ছেড়ে না দিয়ে উল্টো গেড়ে বসেছে।
সম্প্রতি শহরের তবলছড়িস্থ একটি ক্লাব ঘরের উন্নয়নে ক্লাব কাম কমিউনিটি সেন্টার করা হচ্ছে একেবারে হ্রদের তলদেশ থেকে। স্থানীয় মানুষ এবং পরিবেশ সচেতনরা এ স্থাপনার বিষয়ে আপত্তি তোলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের স্বগোচরে আসে। ইতিমধ্যে এ ক্লাব ঘর নির্মাণের সকল স্থপনা সরিয়ে নিতে জেলা ভুমি কার্যালয় থেকেও নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এর পরে খাল,বিল নদী-নালা, জলাধার ইত্যাদি পাবলিকের সম্পত্তি উল্লেখ করে বাংলাদেশ নদী কমিশনের কর্তৃপক্ষও এ ক্লাব ঘরের স্থপনা সরাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে জেলা প্রশাসনকে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা, নদীর পাড় দখলকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজধারী আইনে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বলেছে। এছাড়া জলাধার জলাসয়সহ হ্রদের জায়গা লিজ বা বন্দোবস্ত দিয়ে থাকলে তাও বাতিলে আদেশ দিয়েছে। দেশে হ্রদ, নদী-নালা, জলাধার জলাশয় কেউ যাহাতে দখল করতে না পারে তার জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতেও বলে। এসব অবৈধ দখল বিষয়ে দেশের হাইকোর্ট এর নির্দেশান রয়েছে। তাই কাপ্তাই হ্রদকে বাঁচাতে আইনীভাবে কঠোর নিতেও বলা হয়েছে। তাই বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা যেভাবে দখল হতে চলেছে তা রোধ করতেই হবে। এবং যারা অবৈধভাবে দখল করে বাড়ি ঘর তৈরী করেছে এসব উচ্ছেদ করতে হবে। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন কাপ্তাই হ্রদকে দখলমুক্ত রাখতে এবং হ্রদ বাঁচাতে আইন প্রয়োগ করতে হবে।