জেলা প্রশাসককে পত্র, নদী-নালা,খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার পাবলিক সম্পত্তি
রাঙ্গামাটি ফ্রেন্ডস ক্লাবের স্থাপনা সরাতে এবার নদী কমিশনের নির্দেশ
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে ফ্রেন্ডস ক্লাব কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বন্ধসহ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং দখলকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে অপরাধযোগ্য বলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় নদী কমিশন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন জেলা প্রশাসকের নিকট পত্র পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসন সুত্র জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সুত্র আরো জানায়, কমিশনের পক্ষে সহকারী পরিচালক মোঃ আশরাফুল হক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) এর পাঠনো পত্রে বলা হয়, জেলা প্রশাসক ও কালেক্টর বা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তিনি কোন নদীর তীর, ফোরশোরসহ, খালের জমি বন্দোবস্তি সহ ডিসিআর প্রদান করে থাকলে অবিলম্বে বন্দোবস্তি বাতিল করবেন এবং করাবেন এবং এই শ্রেণীর পাবলিক সম্পত্তি কাউকেই অর্থাৎ সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিক কিংবা ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর না করে তার সংরক্ষন নিশ্চিত করবেন। পত্রে আরো বলা হয়, নদ- নদী, খাল বিল, জলাশয় এবং জলাধারের এসব জমির শ্রেণী কোনভাবেই পরিবর্তন করা যাবেনা, এমনকি অর্থনৈতিক জোন, আশ্রয়ন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রিসোর্ট, ইমিউজমেন্ট পার্ক কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে কাউকেই বরাদ্দ বা বন্দোবস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কোনক্রমেই উন্নয়নের অজুহাতে নদ-নদী-জলাশয়ের জমি অধিগ্রহণও করা যাবে না।
নদী কমিশনের প্রেরিত এ পত্রে রাঙ্গামাটি শহরে ফ্রেন্ডস ক্লাব কাপ্তাই হ্রদের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ বন্ধকরণ এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণ’ শীর্ষক বিষয়ে লেখা এই চিঠিতে বলা হয়, ‘কাপ্তাই হ্রদ একটি পাবলিক সম্পত্তি যা জেলা প্রশাসক ও কালেক্টর নিশ্চয়ই অবগত আছেন। নদ নদীর জমি অধিগ্রহণ বা বন্দোবস্তি প্রদান কিংবা শ্রেণী পরিবর্তন বা উক্তরূপ জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী। তাই ফ্রেন্ডস ক্লাব’ এর অবৈধ স্থাপনা অপসারণের পরামর্শ দিয়েছে দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়-জলাধার সংরক্ষনে রাষ্ট্রীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নদী কমিশন। ফ্রেন্ডস ক্লাব ভবন নির্মাণ বন্ধকরণ এবং অবৈধদখল উচ্ছেদসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধযোগ্য মামলা রুজুসহ আইনী ব্যবস্থাগ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে কমিশনে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। সেই সাথে পাঠানো প্রেরিত ঐ পত্রে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্টের একাধিক রিট পিটিশনের নির্দেশনাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় প্রশাসনকে।
পত্রে আরো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০’র ২(চ) বর্ণিত সংজ্ঞানসুারে কাপ্তাই হ্রদ প্রাকৃতিক জলাধারের অন্তর্ভূক্ত। বর্ণিত আইনানুসারে প্রাকৃতিক জলাধার অবৈধ দখল, ভরাট, কিংবা উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যবহারের এখতিয়ার কোন কর্তৃপক্ষের নেই। প্রাকৃতিক জলাধার আইনের (৫) অনুসারে ফ্রেন্ডস ক্লাবের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ১৩৩,১৩৫,১৩৭, এবং ১৩৯(ক) এবং দন্ডবিধির আওতায় মামলা রুজুসহ আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদ দখল পূর্বক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলে তা প্রশাসনের নজরে আসে। রাঙ্গামাটি ফ্রেন্ডস ক্লাবও অবৈধভাবে হ্রদের জায়গা দখল করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ উঠে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ সাপেক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনেকেই কাপ্তাই হ্রদের জায়গা, জলাধার অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা তৈরী করেছে। যা সুপ্রীম কোর্ট এবং হাইকোর্ট এর নিষেধাজ্ঞা এবং জাতীয় নদী কমিশনের আইনের পরিপন্থি।
জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরিত এই পত্র ও নির্দেশনার অনুলিপি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব এবং বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বরাবরেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপর দিকে এর আগে রাঙ্গামাটি সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) পৃথক এক চিঠিতে ১৫ দিনের মধ্যে ফ্রেন্ডস ক্লাবের এই অবৈধ ভবন অপসারণ করে নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষকে। অন্যথায় ফৌজদারী আইনে অপরাধ বলে গন্য করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
ই-পিসি/আর