॥ মহালছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি ॥
অবশেষে মহালছড়িস্থ থলিপাড়ায় কিশোরী ধর্ষন ঘটনায় এক ধর্ষককে আটক করেছে পুলিশ। ধর্ষিতার পিতার দায়ের করা মামলার পর মঙ্গলবার (৮সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকা থেকে মূল হোতা আল মামিন (২৭) কে আটক করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকীদেরও আটক করতে তদন্ত চলছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানান, ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠি মারমা সম্প্রদায়ের ধর্ষিতা কিশোরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে স্থানীয় নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন। মহালছড়ির স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ূয়া ঐ কিশোরীকে নানা ভাবে প্রলোভনে ফেলে তার সরলতার সুযোগ নেয় আল আমিন। ঘটনার দিন ঐ কিশোরীকে তার সাথে দেখা করতে উপজেলার থলিপাড়া গ্রামের রাবার বাগানে আসতে বলে। পরে আল আমিনের সাথে দেখা করতে গত ৩১ আগষ্ট সন্ধ্যা ৭টায় রাবার বাগানে গেলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অন্য যুবকরাসহ আল আমিন তাকে জোর পূর্বক বাগানের জঙ্গলে নিয়ে যায়। এসময় ধস্তধস্তির এক পর্যায়ে তার কোমড়, বাম হাত ও কপালে আঘাত করে। পরে আল আমিনসহ তার আরো তিন বন্ধু মিলে কিশোরীকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় কিশোরী অজ্ঞান হয়ে পড়লে ধর্ষকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এভাবে রাত ৩টার দিকে কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে নিজেকে সামলিয়ে একটি মন্দিরের পাশে তার বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বাড়িতে উঠে। পরে ঐ শিক্ষক তার পরিবারে খবর দিলে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনার পরের দিন সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রতন শীল এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে সালিশ করে ধর্ষকদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এসময় স্থানীয় আরো কয়েক ব্যক্তিও সালিশে উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ভীতির সৃষ্টি করে। পরে এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকে লেখালেখি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বিচার দাবি করে গণমাধ্যমে প্রেস বিবৃতি প্রদান করে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকায় ৪ সেপ্টেম্বর মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। পরে ধর্ষিতার পিতা ৭ সেপ্টেম্বর বাদি হয়ে ধর্ষক আল আমিনকে প্রধান করে আরো অজ্ঞাত তিন জনকে আসামী করে মহালছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকা থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটার দিকে ধর্ষক আল আমিনকে আটক করে।
স্থানীয় সুত্রগুলো আরো জানান, ঘটনার পর মহালছড়ি থানার ওসি নিজেও বেশচেষ্টা চালিয়েছিলেন ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে। কিন্তু ধর্ষিতার পরিবার ও তার আত্মীয়স্বজন ভয়ে কোন তথ্য দেন নি এবং থানায় অভিযোগও দায়ের করেননি। যার কারনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারেন নি ওসি।
অপরদিকে এ ঘটনায় ধর্ষকদের পুলিশে সোপর্দ না করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রতন শীল সালিশের মাধ্যমে ধর্ষকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যপক সমালোচনার শুরু হয়। অবশ্য রতন শীল এ ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে ফেস বুকে অপ প্রচার চালাচ্ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মহালছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর মামলা বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ পর ধর্ষিতার মামলা করেছেন। মামলা রেকর্ড হওয়ার পর পরই মহালছড়ি থানা থেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ টিম পাঠানো হয় এবং উক্ত মামলার প্রধান আসামী আল আমিনকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকা থেকে আটক করা হয়। বাকিদের আটক করতে তদন্ত চলছে।
ই-পিসি/আর