[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

ইতিহাসের কঠিন সময়ে বিশ্ব

১২৪

॥ কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম ॥

২০২০ সালকে বিশ্ববাসী কখনোই ভুলবেনা, ভুলতে পারবেনা, সম্ভব হবেনা। বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের শুরু এ বছরের শুরুতেই। প্রাণসংহারি করোনায় গোটা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড। এমন দুর্যোগকাল কেউ কখনো দেখেনি। চীন থেেেক শুরু হয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। চোখের পলকেই যেন সবকিছু তছনছ হয়ে পড়ে! মানুষের সব পরিকল্পনা, স্বপ্ন ভেস্তে যায়। গৃহবন্দী হতে হয় বিশ্বের প্রায় সকল মানুষকে। এখনো থামেনি করোনার ঝড়। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুহার। কবে থামবে এ ঝড় জানেনা কেউ। এই করোনায়ই শেষ নাকি এটি ভবিষ্যতে আরো কোন বড় দুর্যোগের পূর্বাভাস তা বলা যায়না। কেননা এতবড় একটা সংকট পৃথিবীতে যে আসবে সেটা কেউ আঁচই করতে পারেনি। পারেনি ধারণাও করতে। সব জ্যোতিষী আর বিশেষজ্ঞ ফেল!

করোনা নির্মূলের টিকা/ভ্যাকসিন তৈরীর জোর চেষ্টা চলছে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু শতভাগ আশার বাণী কেউ শোনাতে পারছেনা। পৃথিবী সময়ে সময়ে বহু ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। উৎরেও গেছে মানুষ। কিন্তু এবারের কঠিন সময় পার করা সত্যিই দু:সাধ্য ও কষ্টকর। এক করোনা মানুষের জীবনধারা পর্যন্ত পাল্টে দিয়েছে। যে ধারা পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান এমনকি পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় বন্ধ ছিল অনেকদিন। মুহূর্তেই শাটডাউন পৃথিবী! বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন স্পট, নামীদামী হোটেল-মোটেল, শপিংমল বন্ধ থাকছে। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে লেগে যাবে দীর্ঘসময়। আদৌ আগের অবস্থায় ফেরা সম্ভব হবে কিনা কে জানে!

করোনার এই কঠিন সময়ে বিশ্বের অনেক দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ অবস্থা দেখা গেছে। নেই চিকিৎসকের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী, হাসপাতাল কিংবা প্রয়োজনীয় পথ্য। এমনকি করোনার বাইরে অন্য রোগের চিকিৎসা পেতেও মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতেও সংকট পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে চিকিৎসকসহ বহু মানুষের প্রাণ গেছে। বলতে গেলে আধুনিক সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা করোনার কাছে প্রচণ্ড রকমের মার খেয়েছে। দিয়েছে বড় ধরণের ঝাঁকুনি। অতি উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া কোন উপায় নেই। করোনায় বিপর্যস্ত হয়েছে তাবৎ বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের আশংকা প্রকাশ করেছে। চাকরি ও অর্থ উপার্জনের পথ রুদ্ধ হতে পারে বহু মানুষের। বাড়তে পারে বেকারত্বের হার। অর্থ ও খাদ্যসংকটের কারণে বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে- এমন আশংকাও করা হচ্ছে।

এই করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ভেংগে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাবর্ষ পাল্টাচ্ছে, সব ধরণের পরীক্ষা অনিশ্চয়তায়। শেষ পর্যন্ত কী হয় বলা যায়না। যেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রা, যদিও ফেসবুক, অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। করোনার কারণে শিশু-কিশোররা সবচেয়ে বিষাদের সময় পার করছে। খেলতে, ঘুরতে পারছেনা তারা। স্কুল বন্ধ, তার উপর ঘরে থাকতে থাকতে জীবন তাদের একেবারে পানসে হয়ে গেলো! দম বন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি। টিভি, স্মার্ট মোবাইলেও তাদের আর মন ভরছেনা। বাইরে যাওয়ার জন্য আকুতি সর্বদা। করোনা ভাইরাস বিস্তারের পেছনে পরিবেশ ধ্বংসকে দায়ী মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বনভূমি নষ্ট, পাহাড় কাটাসহ সবুজ অরণ্য উজাড় করার কারণে করোনা তার উপযোগি পরিবেশ পেয়েছে। যেখানে তার বিচরণ খুব সহজ হয়েছে। বিশ্বের ধনীদেশসহ সব দেশকে সবুজ প্রকৃতি রক্ষার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে- এমন তাগিদ দিয়েছে করোনা।

কঠিন এই দু:সময় কখনোই যেন আর না আসে। না আসে যেন বিষাদে ভরা কোন বছর। হয়তো আমাদের অবিচার, অনাচার আর নীতি-নৈতিকতাহীন কর্মকান্ডের ফলও হতে পারে করোনার এমন ছোবল। অনেক হয়েছে আর না, সংশোধন আমাদের হতেই হবে। বিশ্বকে এমন কঠিন সময়ে যেন আর পড়তে না হয় সেজন্য আমাদেরকেই সতর্ক হতে হবে। ফিরে আসতে হবে সব ধরণের জোর, জুলুম থেকে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার ঘটাতে হবে। নিরীহ ও অসহায় মানুষের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতার হাত। রণসজ্জা নয়, পৃথিবীকে সুরক্ষার সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে। পরাশক্তিগুলোকে যে কোন আতংক ও যুদ্ধাবস্থা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইতিহাসের এই কঠিন সময়টি যেন আমরা দ্রুতই পার করে আবারো আগের পৃথিবীতে ফিরতে পারি সেজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি।
লেখকঃ- শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

ই-পিসি/আর