ধর্ষীতার সম্ভ্রম হানির চিকিৎসা খরচ দশ হাজার টাকা
মাহলছড়িতে কিশোরী ধর্ষণ ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এখনো অজ্ঞাত
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার থলিপাড়া এলাকায় কিশোরী ধর্ষণ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নারীর পরিবার এখনো থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কেউ অবহিতও করেনি। ধর্ষণ ঘটনায় সালিশের মধ্যে দশ হাজার টাকায় দফারফার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলগের সভাপতি এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অস্বিকার করেছেন। স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা জানিয়েছে ধর্ষণ ঘটনা পরবর্তী সালিশ বৈঠক হয়েছে। তবে ধর্ষিতার পরিবার মামলা করতে সাহস পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে।
এদিকে স্থানীয় অনেকের অভিযোগ অপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় না তুলে ধর্ষণ ঘটনার জন্য সালিশের মাধ্যমে দশ হাজার টাকায় সমঝোতার ঘটনায় রীতিমত ঘৃনার জন্ম দিয়েছে মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানান কথার ঝড় উঠেছে। প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে ধর্ষীতা ও ধর্ষকের বিষয়ে ব্যবস্থা কি। তারা প্রশ্ন তুলেছেন ঘটনায় জড়িতরা কেমন ক্ষমতার অধিকারী যে সবাই ভীত থাকবেন।
স্থানীয় সচেতন মহল এবং গণমাধ্যম কর্মীরা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র নৃ-জাতি গোষ্ঠী মার্মা পরিবারের এক কিশোরীকে গত ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় মহালছড়ির থলিপাড়া এলাকায় নিয়ে শারীরিক নির্যাতনসহ চার জনে মিলে তাকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মহালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রতন শীলের সমঝোতায় ১ সেপ্টেম্বর একটি ক্লাব ঘরে বৈঠক হয়। বৈঠকে কিশোরীর চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় অভিযুক্ত যুবকদের। এ ঘটনায় আইনি কোন আশ্রয় না নিতে এবং কাউকে কিছু না বলতেও কিশোরীর পরিবারকে চাপ দেয়া হয় সালিশে।
থলিপাড়া মৌজার হেডম্যান কালাচান চৌধুরী জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল সালিশের কথা বলে তাকেও ডেকে আনেন। তিনি সালিশে শেষের দিকে বসার পরই জানতে পারেন এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিশোরীকে চিকিৎসা করানোর জন্য অভিযুক্ত যুবকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন চেয়ারম্যান রতন শীল। ধর্ষণের শিকার ঐ কিশোরী শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালেও যেতে পারছে না। ভিক্টিমের পরিবার খুবই গরীব এবং অসহায় বলে তিনি জানান। তিনি একজন হেডম্যান এবং অভিভাক হিসেবে কেন মামলা করাচ্ছেন না জবাবে, তার পরিবারতো এগিয়ে আসছে না বলে পাহাড়ের সময় প্রতিবেদককে জানান।
তবে এ বিষয়ে মহালছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রতন শীল সালিশ বৈঠকের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, লোকজন ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা লিখছে। তিনি ধর্ষন ঘটনা এবং সালিশ বৈঠকের সম্পর্কে জানেন না বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে ঘটনার চার দিন গত হতে চললেও উপজেলা প্রশানের খোদ নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা দত্ত কিছু জানেন না এবং তাঁকে কেউ অভিযোগ করেননি বলে জানান। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার অভিযোগ করলে তার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার সকালে মাহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জাহাঙ্গীর বলেছেন, ঘটনা শোনার পর সাথে সাথেই ভিক্টিমের বাড়িতে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভিকটিমের বোনের জামাই এর সাথে কথা বললে তিনি কোন অভিযোগ নাই বলে জানান। এ বিষয়ে সালিশ হচ্ছে জেনে ১সেপ্টেম্বর বিকালে থলিপাড়া ক্লাব ঘরে বৈঠকস্থলে পুলিশ পাটিয়েছি তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায় নি। এপরও ৩ সেপ্টেম্বর ওসি নিজেই ভিক্টিমের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিলে তার কোন অভিভাবককে পাওয়া যায় নাই। তবে তাদের সাথে ফোনে আলাপ হয়েছে। ওসি বলেছেন, তারা জানান পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন।
ই-পিসি/আর