অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাপ্তাই হ্রদের ব্যবস্থাপনায় সজাগ থাকতে হবে
এশিয়া মহাদেশের বিশাল লেক কাপ্তাই লেক। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে এই লেকের সৃষ্টি হলেও হাজারো পরিবার ভুমিহারাও হয়ে পড়ে। অপর দিকে কিন্তু কাপ্তাই বাঁধের কারনে সৃষ্ট এই লেক মানুষের কর্মের সৃষ্টি এবং এর নির্ভর মাছের ব্যবসার একটি বড় কেন্দ্রও তৈরী হয়। যার কারনে এখানে কর্মক্ষেত্রের একটি বড় স্থান গড়ে উঠে। এ লেক নির্ভর হাজারো জেলের জীবন জীবিকার সৃষ্টি হয়। একটি সময়ে নানান প্রজাতের মাছের সম্ভার ছিল এ হ্রদ। যদিও মানুষের অত্যাচারে আইন অমান্য করে হ্রদ থেকে যে যার মতো করে মাছ ধরতে গিয়ে, ব্যবসা করতে গিয়ে বহু প্রজাতের মাছ এখন বিলুপ্ত।
অভিযোগ রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে মাছের ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে মৎস্য কর্পোরেশনের বেশ কিছু কর্মকর্তা লাগাতার দূর্নীতি করে একদিকে সরকারি টেক্স আত্মসাত করেছে, পাশাপাশি হ্রদের মাছের নানান জাতকে বিলুপ্ত করে ফেলেছে। এ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে টানা অভিযোগ থাকলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা ব্যবস্থানার ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনীর একজন কমান্ডিং কর্মকর্তার হাতে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হলে সরকারের রাজস্ব খাতের আয় বাড়তে থাকে। এ আয় বাড়তে বাড়তে এখন প্রত্যাশার বেশী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত মাছের সংখ্যা কমাতেও বর্তমান ব্যবস্থাপনা কাজ করছে।
মাছের প্রজন এবং ডিম ছাড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর জেলা প্রশাসন তিন মাসের জন্য সকল প্রকার মাছ শিকার এর উপর বিধিনিষেধ জারি করেন। জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত এর সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া হয়। কেননা এ সময়ে মাছের বিস্তার এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধিতে ভালো ভুমিকা রাখে। সম্প্রতি বিধিনিষেধের সময় শেষে মাছ শিকারের জন্য উন্মক্ত ঘোষনা করা হলে জেলে ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটে। বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার শেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২শত মেঃটঃ মৎস্য আহরণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। প্রথম দিনেই মাছ আহরণ এবং এসব মাছের বাজার মূল্য চোখে পড়ার মতো।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক ভাবে মাছের প্রজনন নিশ্চিত করণ এবং হ্রদে অবমুক্ত মাছের পোনা প্রাকৃতিক পরিবেশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ১মে থেকে ১০আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার মাছ আহরণ, বাজারজাত করণ ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মাছ আহরণ খুলে দেয়ার পর প্রথম দিনই ২শত মে.টন মাছ আহরণ করা হয়েছে বলে রাঙ্গামাটি মৎস্য কপোরেশন জানায়। কর্পোরেশন ও ব্যবসায়ী সুত্র জানায়, রাঙ্গামাটিতে মৎস্য আহরণের উপর নির্ভরশীল প্রায় ২৩ হাজার জেলে রয়েছে। মাছ ধরা বন্ধকালীন সময়ে এবার ১৯ হাজার জেলে পরিবারকে সরকার বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাত করণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নৌ পুলিশ মোতায়েন করা থাকায় এবার মাছ শিকার বন্ধের সময় অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে কিছুটা কার্যকর ছিল। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময় হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল এসব কারণে এবার লেকে মাছের উৎপাদন বেশী হয়েছে বলে কর্পোরেশন সূত্রটি জানায়।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ কাপ্তাই হ্রদ দেশের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কৃত্রিমভাবে তৈরি লেকগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৭শত ১৫ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের এ লেকটি মূলত তৈরি হলেও মৎস্য উৎপাদন, কৃষিজ উৎপাদন, জলপথে যাতায়াত, ফলজ ও বনজ দ্রব্য দূর্গম পথে পরিবহন, জেলে, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে মৎস্য সেক্টরে কাপ্তাই হ্রদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। এই হ্রদ থেকে প্রতিবছর ১২ কোটি টাকার মৎস্য আহরণ করা হয়ে থাকে। যা পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাপ্তাই হ্রদের ব্যবস্থাপনায় সজাগ থাকতে হবে।