[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
ইব্রাহিম খলিল বিএনপির একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দবান্দরবানে আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির অফিস ডাকাতি, ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা লুটবান্দরবানের রুমা কাঠ বোঝাই জীপ দূর্ঘটনায় হেলপারের মৃত্যুএই সরকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চায়: পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপবান্দরবানে আওয়ামীলীগের সাত নেতাকে গ্রেফতারবান্দরবানে ১হাজার ৭শত পিস ইয়াবাসহ কৃষক দলের নেতা আটকখাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে কৃষকের প্রনোদনা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ, এসব কি হচ্ছেঅবশেষে ছাত্রদল নেতা শাহ আলমের কঙ্কাল ১৫ বছর পর কবর থেকে উত্তোলনরাঙ্গামাটির লংগদুতে বিশ্ব রেড ক্রস দিবস উপলক্ষে র‌্যালী ও আলোচনা সভাবান্দরবানের থানচিতে নিজ গ্রামে ফিরলেন বম জনগোষ্ঠীর আরো এক পরিবার
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

লামা বাল্যবিবাহের হিড়িক

দুপুরে কনের বাড়িতে বাল্যবিবাহ বন্ধ, রাতে বরের বাড়িতে বিয়ে

৬৭

॥ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান লামা ॥

মেয়েটি লামা উপজেলার গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। অনেকের মত স্বপ্ন ছিল জীবনে ভালো কিছু করার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন সে অনেক মেধাবী। কিন্তু বাবা-মা জোর করে বাল্য বিবাহ দেয়ায় হল স্বপ্নভঙ্গ। গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে গজালিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ পাড়াস্থ মেয়ের বাড়িতে আয়োজন করা হয় বাল্য বিবাহের। বিষয়টি লামা উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে বাল্য বিবাহটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অদম্য কনে ও বরের বাবা-মা সেইদিন রাতে মেয়েকে গজালিয়া হতে লামা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নারকাটা ঝিরিতে বর মোঃ আবচারের বাড়িতে এনে বিবাহ কার্য্য সম্পাদন করে। রবিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে বিবাহের বৌ ভাতের আয়োজন করলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। মোঃ আবচার নারকাটা ঝিরি এলাকার আবুল কাসেমের ছেলে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশীদ বলেন, বাল্য বিবাহটির বিষয়ে জানতে পেরে বন্ধ করা হয়েছিল। নিষেধ করার পরেও বাল্য বিবাহ সম্পাদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গজালিয়া বাজার পাড়ার কয়েকজন জানান, গত কয়েকদিন আগে গজালিয়া বাজার পাড়ার বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর এর নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ের বাল্য বিবাহ হয়েছে। কেউ বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত কয়েকমাস যাবৎ মাধ্যমিক স্কুল গুলো বন্ধ থাকায় উক্ত এলাকা ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীদের বাল্য বিবাহের হিড়িক পড়েছে।

প্রশাসন বন্ধ করার পরেও বাল্য বিবাহটি হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লামা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নারী নেত্রীরা বলেন, লামাতে এই পর্যন্ত হওয়া বাল্য বিবাহ গুলো বন্ধ করে প্রশাসন কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়নি। তাই সবাই প্রশাসনের ভূমিকাকে হালকাভাবে নেয়। এছাড়া বেশ কিছু সামাজিক কারণে মেয়েদের নিয়ে অভিভাবকদের মনে বড় স্বপ্ন নেই। অভিভাবকদের লক্ষ্য মেয়েদের বিয়েতেই আটকে আছে।

তারা আরও বলেন, সমাজের প্রবলতর মনোভাব বাল্যবিবাহের পক্ষে। প্রথা ও রীতিনীতির ঝোঁকও সেদিকেই। আছে নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র্য ও শিক্ষা-সচেতনতারও অভাব। “উদ্ভাবনী উপায়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ” নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালে একটি বই বেরিয়েছে। বইটিতে ভুয়া জন্মসনদ আর কাজির কারচুপির সাহায্যে অভিভাবকেরা অনায়াসে বিয়ে দেয়া এবং ধরা পড়লে কিছু সাজা হচ্ছে কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে তা অবৈধ বা বাতিল হচ্ছে না, টিকে থাকছে এই দুইটিকে বাল্যবিবাহের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের দুর্বল অবস্থানের কারণে সরকার এই বাধাগুলো দূর করতে পারছে না। অপরদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয় গুলো জেনেও না জানার ভান করার কারণে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যাচ্ছে না। সকল বাল্য বিবাহের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পূর্ব অবগত থাকে।

এই বিষয়ে গজালিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কেউ আমাদের কথা শুনেনা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানাননি কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

বাল্য বিবাহের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গজালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ দে বলেন, গত ১ বছরে আমার স্কুলের উপজাতি-বাঙ্গালী মিলে কমপক্ষে ৩০/৪০টি মেয়ের বাল্য বিবাহ সম্পাদিত হয়েছে। অনেক মেধাবী মেয়ের বাল্য বিবাহ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন স্কুলে না আসলে বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারি, তখন করার কিছুই থাকেনা।

নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে অনেকে বলেন, বাল্য বিবাহের জন্য অনেকাংশে দায়ী কিছু কাট মোল্লা ও কাজিরা। তথ্য গোপন করে তারা এই সব কাজ করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গভীর রাতে এলাকার কোনো মাওলানা বা কাজিকে ডেকে নিবন্ধন ছাড়া অথবা ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ দেখিয়ে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয়। ভুয়া জন্মসনদ সস্তায় পাওয়া যায়। নোটারি পাবলিকের কাছ থেকে বয়সের ভুয়া হলফনামা করিয়েও বিয়ে হচ্ছে। কখনো কাগজপত্রই থাকছে না। ইদানীং মেয়েকে গোপনে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এমন ঘটনার গোনাগাঁথা নেই।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লামা পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আইনের দুর্বলতা এবং প্রয়োগের শিথিলতাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, অভিভাবকের পাশাপাশি পাত্রপাত্রী, কাজি ও আয়োজনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না। শাস্তি ও জরিমানা না হওয়ায় পরিমাণ বেড়েছে বাল্যবিবাহের। এদিকে সম্পাদনের পরে বাল্যবিবাহ বাতিল হচ্ছে না। ফলে শাস্তি কিছু হতে পারে জেনেও অভিভাবকেরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।

ই-এন/আর