[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

দারিদ্রতা মুছে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে লামার দেড় শতাধিক কৃষক

পাহাড়ের ঢালুতে সবজি চাষে বিপ্লব

৬০

॥ মোঃ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥

লামা উপজেলার ফাইতং বদরটিলা এলাকায় অনাবাদি পাহাড়ের ঢালু জমিতে বেগুন সহ মিশ্র সবজি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আবুল হাসেম সহ দেড় শতাধিক কৃষক। ৮০ শতক (২ কানি) জমিতে বেগুন, শশা, মিষ্টি কুমড়া, তিতকরলা, মরিচ, চিনার ও ঝিংগা চাষে ৬৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার সবজি বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন তিনি। আবুল হাসেম পাশর্^বর্তী চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর এলাকার মৃত সেকান্দর আলী ছেলে।

আবুল হাসেম জানান, সে সহ চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ১৫০ জন কৃষক দলবদ্ধ হয়ে একইভাবে ফাইতং বদরটিলা এলাকায় অনাবাদি পাহাড়ি ঢালু জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছে। বর্তমানে এই এলাকাকে মানুষ আদর্শ সবজি খামার এলাকা হিসেবে ভালো চিনে। ইতিমধ্যে সবজি ক্ষেত থেকে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আড়তদার, ব্যবসায়ীরা এসে বদরটিলা এলাকা হতে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেত থেকে তরতাজা সবজি তুলে ক্ষেতে রেখেই বিক্রি করে নগদ টাকা গুণছে কৃষকরা। ৩/৪ মাস সময়ের ব্যবধানে তারা মূলধনের দুই থেকে তিন গুণ টাকা লাভ করছে।

বদরটিলায় চাষাবাদ করেন এমন আরো কয়েকজন কৃষক হলেন মাহবুবুল আলম, নুরুল আবচার ও মোঃ হেলাল। তারা বলেন, পাহাড়ি জমি হওয়ায় জমির খাজনা খুব কম। ২ কানি জমির খাজনা বছরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে অনেকাংশে নিরাপদ। মাটি উর্বর হওয়ায় সমতল জমির মত কীটনাশক ও সার ব্যবহার করতে হয়না। সবজি চাষে আমরা নিজেরাও শ্রম দিই। বিশেষ করে বর্ষাকালীন সময়ে এই পাহাড়ে চাষাবাদ হয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে আমরা আমাদের এলাকায় সমতল জমিতে চাষাবাদ করি। বর্ষা এলে সমতল জমি পানির নিচে ডুবে থাকায় আমরা বেকার হয়ে যেতাম। গত ২/৩ বছর থেকে বর্ষাকালে পাহাড়ে চাষাবাদ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের দারিদ্রতা মুছে সবাই স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছি।

কৃষক মোঃ হেলাল বলেন, সবজি ক্ষেত থেকে সবেমাত্র ফসল তোলা শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিন বদরটিলা এলাকা হতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৬/৭ টন সবজি সরবরাহ হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক পরে পুরোপুরি ফলন আসরে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ টন সবজি এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবে। ব্যবসায়ীরা নিজেরা এখানে এসে সবজি ক্রয় করে। এখানে সবচেয়ে বেশী চাষ হয় বেগুন। এখানের বেগুন বিখ্যাত। এছাড়া ঢেঁড়শ, লাউ, বরবটি, তিতকরলা, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, শশা, কলা, চিনার, গুনচি, মরিচ, ঝিংগা, চিচিঙ্গা চাষ হয়। আমরা কীটনাশকের ব্যবহার কম করে প্রাকৃতিক জৈব সারের ব্যবহার বেশী করছি।

পাশর্^বর্তী চকরিয়া উপজেলা হতে বদরটিলা এলাকায় সবজি ক্রয় করতে আসেন পাইকারী ব্যবসায়ী মোঃ আলমগীর। সবজি খামার পরিদর্শনে সরজমিনে গেলে তার সাথে দেখা হয়। তিনি বলেন, আজকে আমি প্রায় ৫ হাজার কেজি বেগুন ও ১ হাজার কেজি শশা ক্রয় করেছি। প্রতি কেজি বেগুন পাইকারী ২৫-৩০ টাকা ও শশা প্রতি কেজি ২০ টাকা করে ক্রয় করেছি। এবার বাজারে সবজির ভালো দাম থাকায় চাষীরা লাভবান হবেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফাইতং বদরটিলা এলাকায় চকরিয়ার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের দেড়শত কৃষক প্রায় ১২০ একর পাহাড়ে কঠোর পরিশ্রম করে গড়ে তুলেছে আদর্শ সবজি খামারের। এতে করে দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই জমি থেকে বেগুন সহ নানা প্রজাতির সবজি সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে কৃষকরা।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার থোয়াইহ্লা চিং মার্মা বলেন, এলাকার সবজির চাহিদা মিটিয়ে ফাইতং বদরটিলা এলাকার সবজি ও শাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তাদের দেখে স্থানীয়রাও সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমরাও সবাইকে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে ফিরে সবজি চাষে ঝুঁকতে পরামর্শ দিচ্ছি। আদর্শ সবজি খামারের সাফল্য দেখে অনেকেই অবাক। লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সানজিদা বিনতে সালাম বলেন, কারিগরি সহযোগিতা সবসময় থাকবে তাদের জন্য। পাহাড়ের ঢালুতে কৃষকরা সবজি চাষ করে যে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তা সত্যিই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।