[vc_row][vc_column css=”.vc_custom_1596871563159{margin-bottom: 0px !important;}”][vc_column_text css=”.vc_custom_1596874329023{padding-top: -30px !important;}”]

শিরোনাম
দীঘিনালায় যৌথবাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ কর্মী আটকবান্দরবানে রিপোর্টার্স ইউনিটির ভবন জোড়পূর্বক দখলের অভিযোগবান্দরবানের থানচিতে ১১ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও গণসমাবেশমানিকছড়িতে চাঁদাবাজি করতে এসে জনতার হাতে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটকবরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগরাঙ্গামাটির লংগদুতে নৌকার কিছু নেতাকর্মী এখন ট্রাকে উঠে গেছেকাজে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে-পার্বত্য উপদেষ্টাসড়ক দুর্ঘটনায় কাপ্তাই বিএফআইডিসি এলপিসি শাখার কর্মচারী নিহতমানিকছড়ির নবাগত ইউএনও’র সাথে বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের শুভেচ্ছা বিনিময়খাগড়াছড়িতে বন্যাকবলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]

খাদ্যশস্য ও মৃত ব্যক্তির অর্থ লুটপাট

ছেলের বিরুদ্ধে বাবার অভিযোগ

১১৭

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

গুচ্ছগ্রামে সরকার থেকে পাওয়া বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য ও মৃত ব্যক্তির অর্থ লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ চার বছর ধরে এই অনিয়ম কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন গুচ্ছগ্রামের সদস্যরা। এমনকি রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন,স্বয়ং তার বাবা সুলতান আহমেদও। তিনি জানান, ৩ মাসে ২শত ৭৩ কেজি চাউল ও গম বরাদ্দ আসে গুচ্ছগ্রামে। সেখান থেকে ১৮৪ কেজি বিতরণ করলেও বাকিগুলো তিনি আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করেন রাসেলের বাবা।

জানা গেছে,গত ২২ জুলাই বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গুচ্ছগ্রামের ৭৫ বাসিন্দা গণস্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, গুচ্ছগ্রামে প্রতি তিন মাসে প্রতি পরিবারের জন্য ২৭৩ কেজি চাউল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হলেও রাসেল ১৮৪ কেজি বিতরন করেন। বাকি ৮৯ কেজি খাদ্য শস্য বরাদ্দে কম বিতরন করেন। প্রতি বরাদ্দ থেকে ৭৫ পরিবারের ৮৯ কেজি করে ৬ হাজার ৬শত ৭৫ কেজি চাউল ও গম আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও গত এপ্রিল, মে, জুন তিন মাসের বরাদ্দকৃত চাউল ও গম কাউকে না জানিয়ে বিক্রিও করে দেন। অবশেষে জানাজানি হলে নামে মাত্র টাকা বিতরণ করে সিংহভাগ তিনি নিজে আত্মসাৎ করেন। ৫ থেকে ৭টি পরিবারকে নামে মাত্র ১০০ কেজি চাউল বিতরন করা হয়। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করিলে হুমকি ধামকি দেন এবং গুচ্ছগ্রামের ৭৫ পরিবারের সকলে একত্রিত হয়ে তার কিছু করতে পারবেনা এবং অভিযোগকারীর কার্ড বাতিল করে দিবেন বলে হুমকি দেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী। অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, গুচ্ছগ্রামের যে কার্ডধারী পরিবার প্রধানের মৃত্যু হয়েছে সেই মৃত ব্যাক্তির কার্ড পরিবর্তন করতে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা অফিস খরচের নামে নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অত্যাচার, নারী নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার, মিথ্যা মামলায় জিম্মি, মাদক, চাঁদাবাজিরও অভিযোগও রয়েছে। ফলে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে সাময়িকভাবে বহিস্কারও করা হয়। এমনকি যুবলীগ থাকাকালীন ও বহিস্কার করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে গুচ্ছগ্রামের খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়ম করে আসছে। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের নাম পরিবর্তন নামে মানুষের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা করে লুটপাট করছে। তিনি আরও জানান, কেউ তার অনিয়ম ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বললে মামলা মোকাদ্দমাসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন।

গুচ্ছগ্রামের সাবেক সভাপতি মোঃ আলী হোসেন অভিযোগ করে বলেন,দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি গুচ্ছগ্রামের সভাপতি ছিলেন। চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী ৪ বছর ধরে এই অনিয়ম ও লুটপাট করে আসছেন। এব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চাইলে তাকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন রাসেল চৌধুরী। বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, তিনিও চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ শুনে আসছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর সোবহান বলেন, তিন মাসে ২শত ৭৩ কেজি খাদ্যশস্য বরাদ্দ আসে গুচ্ছগ্রামের জন্য। এরমধ্যে ২ মাসের গম এবং ১মাসের চাউল। কিন্তু দুই বছর আগে চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জেলা পরিষদের একটি চিঠি দেখিয়ে তাদের বলেন,সরকারের ফান্ডে গম নেই। গমের পরিবর্তে ৭৫টি গুচ্ছগ্রামের পরিবারের জন্য ৬শত ৭৮ গ্রাম করে চাউল অর্থাৎ প্রায় ১৮৪ কেজি চাউল দিয়েছে সরকার। ঐ চিঠি দেখিয়ে খাদ্যশস্যের পরিমাণ তাদের কম দেখানো হলো। এক বছর পরে পার্শবতী ইউনিয়নে খোঁজ নিতে গেলে জানতে পারেন বাকি সব খাদ্যশস্য চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী আত্মসাৎ করছেন। এছাড়াও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের নাম পরিবর্তনেও বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু এতদিন কেউ ভয়ে মুখ খুলেনি। কারণ,তাদের মামলা-হামলাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হতো বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এ পযর্ন্ত সরকার থেকে যে বরাদ্দ গুলো এসেছে, তা নিয়ে ইউপি সদস্যদের সাথে কোন সমন্বয় না করে নিজের ইচ্ছে মতো বন্টন করে এবং ইউপি সদস্যদের নামে যা বরাদ্দ আসে তাও তিনি আত্মসাৎ করে। কিছু বললেই উল্টো মামলা মোকাদ্দমার হুমকি দেন চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী।

এসব বিষয়ে বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩৭নং আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর কাছ জানতে চাইলে তিনি জানান, সামনে ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিল। যার কারণে তাকে ফাঁসানোর জন্য এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগগুলো করছেন। আপনার বাবাও আপনার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বার্থের লোভে তার বাবা এই অভিযোগ করেছেন বলে তিনি জানান।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রামের সরকারী বরাদ্দকৃত খাদ্য শস্য বিতরণে অনিয়ম ও মৃত ব্যাক্তির স্বজনদের নাম পরিবর্তনে বিপুল পরিমান অর্থ গ্রহনের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এই অভিযোগটি উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তাকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি অভিযোগের কোন সত্যতা মিলে লিখিতকারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।