বান্দরবানের লামায় উচ্ছেদ আতংকে কালু ম্র্রো পাড়া
॥ মোঃ রফিকুল ইসলাম, লামা ॥ বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম কালু ম্রো পাড়ার ‘পাড়া বনের’ জায়গা দখল ও সেখান থেকে গাছ বাঁশ কেটে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই পাড়ার বাসিন্দারা। পাড়া বনের জায়গা ও পাড়া বন রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন ম্রো জনগোষ্ঠী।
পাড়ার কারবারী মাং রু ম্রো জানিয়েছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিচার দিয়েও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না। মাং রু ম্রো আরো জানান,‘দেড় শত বছর যাবৎ কয়েক পুরুষ ধরে ওই এলাকায় তাদের বসবাস। পাড়ার আশপাশের পাড়া বনের গাছ ও বাঁশ দিয়ে চলে তাদের জীবন জীবিকা। রয়েছে জায়গার কাগজপত্র। তারপরেও তারা রক্ষা করতে পাচ্ছে না তাদেও আদি নিবাসের ভুমি। পাড়া বন হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষিত এক বিস্তীর্ণ বনভূমি। পানির উৎস সংরক্ষণ, পাহাড়িদের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পাড়া বনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং অপরিহার্য।
কালু ম্রো পাড়ার বাসিন্দা ক্রং পং ম্রো সহ অনেকে জানান, ‘প্রায় মাস-দুয়েক ধরে পাহাড়ের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন ধ্বংস করা হচ্ছে। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও মৌজার হেডম্যান হ্লাথুই মং মার্মার ছেলে সুইক্যাছা মারমা, ব্যবসায়ী মোঃ ইউনুস, বেলাল এবং মোঃ ইলিয়াস আমাদের পাড়া বনটি ধ্বংস করে দিচ্ছে। গাছ, বাঁশ পাচারকারীরা নির্বিচারে পানির উৎস নষ্ট করে দিচ্ছে। পানি ছাড়া দুর্গম এই পাহাড়ে কিভাবে টিকে থাকবে তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ পাচারকারী গংরা পৌষ্য দুটো হাতি দিয়ে নিয়মিত গাছ টানছে।
পাড়াবাসি আরো বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা কোন সাহায্য না করে উল্টো বন ধ্বংসকারীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাড়া বন থেকে প্রায় ছয় হাজার বাঁশ এবং প্রায় ৪০টি বড় গর্জন গাছ কেটে নিয়ে গেছে।
কারবারি মাং রু ম্রো বলেন, পাড়ায় ৩৪ জন সদস্য নিয়ে ৭টি পরিবারের বাস। প্রায় মাস তিনেক আগে পাড়ায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। পাড়াবাসীর খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল এই পাড়া বনের কয়েকটি গাছ বিক্রি করেই। খাদ্য সঙ্কটসহ পাড়াবাসী যে কোনো বড় ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হলে পাড়া বনটি সবসময় সুরক্ষা করে। এছাড়া আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে গাছ পাচারকারীরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, বলে জানান স্থানী কারবারীসহ বসবাসকারীরা।
এই বিষয়ে সুইক্যাছা মার্মা বলেন, মুরুংরা অনেক জায়গা দখলে আছে। হেডম্যান রিপোর্ট নিয়ে জায়গা দখল করেছি। নিজের জায়গা থেকেই গাছ-বাঁশ কাটছি। এলাকার চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাড়ার লোকেরাই অতিরিক্ত জায়গা দখল করে আছে। যেখান থেকে বাঁশ, গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে সেই জায়গাটি পাড়া বন নয়।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা জামাল বলেন, মূলত মৌজা প্রধান হেডম্যান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে প্রতিবেদন দেওয়ার কারণেই সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস.এম কাইচার বলেন, হাতি দিয়ে পাড়াবন থেকে গাছ পাচার খুব দুঃখজনক, আমরা এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।